রাজধানীর কাকরাইল, হাইকোর্ট, আরামবাগ, বিজয় নগরসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশ, বিএনপি ও জামায়াত কর্মীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জামায়াতের নবাব আলী নামের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর মতিঝিলের আরামবাগে জামায়াতের কর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে সেখানেও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে জামায়াত কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে শাপলা চত্বরে গিয়ে জমায়েত হয়। এভাবে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। এরপর বিজয় নগরে বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, পরে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
এদিকে পুলিশের ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেছেন, “বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে পুলিশের ওপর হামলা করেছে, যা আমরা প্রত্যাশা করিনি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের ডাল ভেঙে ও হাতের লাঠি দিয়ে নামফলক, গেটে হামলা চালায়। তারা ভেতরে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিএনপির অনুসারীরা। পুলিশ বাধা দিতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংর্ঘষ বাধে। এই ঘটনার রেশ ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়।
এদিকে রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারের সামনে এক হামলায় মো. সুজন (২৬) নামের এক যুবলীগ কর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে কাকরাইলে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সামনে বৈশাখী বাস ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাসে থাকা মোহাম্মদ নাসির (২৫) নামের এক যাত্রী আহত হন।
তবে কে বা কারা বাসটি ভাঙচুর করে তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। বাসযাত্রী নাসিরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা মো. মুক্তা জানান, বৈশাখী বাসে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক হামলা চালায়। এতে নাসির আহত হন। পরে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তিনি ঢামেকে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে রমনা পুলিশ জোনের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ সালমান ফারসি বলেন, “বারবার অনুরোধ করার পরও বিএনপির লোকজন কাকরাইল মসজিদ মোড় খালি করেনি। তারা দুর্ব্যবহার করেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে, পরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হতো।”
এদিকে আরামবাগে পুলিশের গুলিতে নওয়াব আলী শেখ (৬০) নামের এক জামায়াতকর্মী আহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত নওয়াব আলী শেখ নিজেকে জামায়াত কর্মী দাবি করে বলেন, “দুপুরে আরামবাগে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। সেটা অতিক্রম করার সময় পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।”
নওয়াব আলী শেখকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী সোহাগ বলেন, “আহত রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন তিনি। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে দুপুর সোয়া ১টার দিকে চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসি।”
অপরদিকে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে গুলিস্তান পরিবহন গাড়িতে হামলায় বিএম রাজু কামাল (৫০) নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী আহত হয়েছেন। আহত কামাল বলেন, “সাতরাস্তা মোড় থেকে গুলিস্তান যাওয়ার উদ্দেশে গাড়িতে উঠি। পথে দুপুর সাড়ে ১২টায় কাকরাইল মসজিদের আগে রাস্তায় গাড়ির মধ্যে হামলার শিকার হই।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।