বির্তক যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না ছাত্রলীগের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতাদের একের পর এক হুশিঁয়ারির পরও তারা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
চবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২২
শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরে (চবি) ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ উপপক্ষ বিজয়ের অনুসারীরা ‘ব্রাদার্স’ ও ‘মকু’ নামক দুটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে ‘ব্রাদার্স’ পক্ষটি আলাওল হল ও এ এফ রহমান হলে এবং অপরপক্ষ `মকু` সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থানরত। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর একুশের প্রথম প্রহরে ব্রাদার্সের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে মকুর নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ২২ জন আহত হয়।
নেত্রকোনায় ফুল দেওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা
বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নেত্রকোনায় শুরু হয় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন।
জানা গেছে, অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার দায়িত্বে থাকা চিন্ময় তালুকদার বারবার শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছিলেন। শ্রদ্ধা জানাতে আসেনি মাইকে এমন সংগঠন ও ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করায় উপস্থিত সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এছাড়া কে কার আগে ফুল দেবে এনিয়েও শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। এরপর প্রথম প্রহরে আলো জ্বালিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সূচনা করেন নেত্রকোনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র এস এম মহসীন আলম। পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। একে একে সংরক্ষিত আসনের এমপি হাবিবা রহমান খান শেফালি, জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
জুতা পরে শহীদ মিনারে ছাত্রলীগ নেতা
মাদারীপুরে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জুতা পরে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনজুর ইসলাম। তবে তার দাবি, ধাক্কাধাক্কির কারণে জুতা খোলার সুযোগ হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তিনি জুতা পায়ে দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না। আমি এর নিন্দা জানাই।” সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনজুর ইসলাম বলেন, “খুব ভিড় আর ধাক্কাধাক্কির কারণে জুতা খোলার সুযোগ হয়নি। আমি জুতা খুলতে গিয়েছিলাম কিন্তু পেছনে আমাদের নেতাকর্মীর অনেক চাপ ছিল তখন জুতা পায়েই উঠে গেছি।”
শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে ত্রিমুখী সংঘর্ষ
মানিকগঞ্জে শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এরপর নেতাকর্মীদের ঘণ্টব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শহীদ বেদীতে ফুল দিতে আসা সামাজিক-সাংস্কৃতিক মহলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ফুল না দিয়ে শহীদ বেদী থেকে চলে যান।
কিশোরগঞ্জে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু`পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, সকাল ১০টার দিকে তার নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান। এসময় বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে বিএনপি-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিএনপি ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ককটেল বিস্ফোরণেরও ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার সকালে সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফিরছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেসময় কলেজের গেটের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পথচারীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।