ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে তিন নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানে যে ক্যামিকেল গোডাউন ছিল তা আগে জানতেন না। তারা বলছেন, কিছুদিন আগে এখানে মো. ঈসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ভাড়া নেয় এই গোডাউন। এরপর বড় বড় ড্রামে কি যেন মুজদ করে। আগুন লাগার পর এলাকাবাসী জানতে পারল এটা কেমিক্যাল কারখানা ছিল।
এদিকে ভবনের মালিক ফিরোজ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সোমবার (১৪ আগস্ট) দিবাগত রাত কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায় এই অগিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল সোয়া ছয়টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনও জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
সরজমিনে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলার গদারবাগ বাজারের একটু ভিতরে সরু রাস্তায় ফিরোজ আলমের গোডাউন ভাড়া নেয় ঈসমাইল হোসেন। ভাড়া নেওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের ড্রামভর্তি ক্যামিকেল মুজদ করে এখানে। গোডাউনের পাশে লাগোয়া ভবনে ভাড়া থাকতেন কয়েকটি পরিবার। অগ্নিকাণ্ডের পর পাশের ভবন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের ৫ পরিবারের আহত সবার অবস্থাই আশংকাজনক।
ভবনের প্রতিটি রুমের ভিতরে আগুনের ভয়াবহতা দেখা যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাদের প্রাণহানি হয়েছে তারা সবাই এই ভবনের বাসিন্দা ছিলেন। তবে কেমিক্যাল গোডাউনে কারো প্রাণহানির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত জেসমিনের ভাই চান মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার বোন জেসমিনসহ চারজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আনার পর চিকিৎসক জেসমিনকে মৃত ঘোষণা করেন। সোহাগ ও রোজা মনি নামে দুইজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদ সাঈদ নামে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা সোবহান মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখানে যে কেমিক্যাল গোডাউন ছিল তা আমরা কেউ জানতাম না। আজকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস বললো এটা ক্যামিকেল গোডাউন। ক্যামিকেল থাকায় আগুন সহজে থামানো যায়নি। আগুনের ধোঁয়ায় এত লোকের মৃত্যু।”
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায় একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দগ্ধ অবস্থায় আরও চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো একজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে, দগ্ধ ও নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গোডাউনের ভিতর দাহ্য পদার্থ, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনের রোল, ফয়েল পেপারসহ নানা ক্যামিকেল থাকায় আগুন পুরোপুরি নিভতে সময় লেগেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগুন কিভাবে লেগেছে আমরা সে বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, কেমিক্যাল গোডাউন করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে যে অনুমতি প্রয়োজন তার কোনোটিই ছিল না এখানে।”