রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ৫০টি ইউনিট। তাদের পাশাপাশি কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সাহায্যকারী দল। যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি টিম।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। পথে বসেছেন ওই মার্কেটের প্রায় ৩ হাজার দোকানি। ঘটনাস্থলে পোশাক ব্যবসায়ীদের হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায়। এদিকে আগুন লাগার পর আশপাশের মার্কেটের দোকানিরাও তাদের মালামালও অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
ইসলামিয়া মার্কেটের এম এন কালেকশনের মালিক মাহবুব বলেন, “যেখানে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে আমাদের দোকানে হেঁটে আসতে ১০ থকে ১২ মিনিট লাগে। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আমরাও মালামাল সরিয়ে ফেলছি। প্রথমে ভাবছিলাম আগুন নিভে যাবে। এখন দেখি বাড়ছে আর বাড়ছে। আগে জানলে আগেই মাল সরিয়ে ফেলতাম। এখন ভ্যানে মাল আনতেছি আর সরাচ্ছি।”
অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আশপাশের ভবন থেকে মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজারের এনেক্সকো ভবনের কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ৫ম তলায় দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা গেছে আগুন। অন্যান্য তলায়ও আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।
এরমধ্যেও ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মালামাল সরানো জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করার চেষ্টা তাদের। এ সময় ভবনে প্রবেশ করে মালপত্র বস্তায় বেঁধে সরাতে দেখা যায়।
ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, “কিছু করার নেই, ঝুঁকি হলেও অন্তত কিছু রক্ষা করতে হবে। আমরা পথে নেমে গেলাম। আগুনে সব শেষ করে দিল।”
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মার্কেটের চার দিক থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে বাতাসের কারণে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ছে। এই আগুন আশেপাশের আরও চারটি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট, আদর্শ মার্কেট- এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সবগুলোকেই লোকজন বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে ডেকে থাকেন। এই চারটি মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। নানা রকম কাপড় থাকায় আগুনের তীব্রতা বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারই দেশের সব থেকে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ঈদকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর পর থেকেই ধীরে ধীরে জমে ওঠে এ মার্কেটের ব্যবসা। এ বছরও জমতে শুরু করেছিল বঙ্গবাজারের কেনাবেচা। কিন্তু হঠাৎ লাগা আগুন সব কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের।
এর মধ্যে বাড়তি বিড়ম্বনা হিসেবে যুক্ত হয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়। জনতার ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের সহায়তা না করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎসুক জনতার জন্য কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের কারণে দোকানিরা তাদের মালামালও সরাতে পারছেন না।