দেশে গত দুই বছর ধরে ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার না পেয়ে ব্যবসায়ীরা ছুটছেন কার্ব মার্কেটে। কালোবাজারিদের দখলে থাকা সেই মার্কেটে ডলারের দাম বেশি। তবুও আমদানি চাহিদা মেটানোর চেষ্টায় বেশি দামেই ডলার কিনছেন তারা।
সংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শতভাগ সুফলের দেখা মেলেনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আসছে ৬ জুন। সংকট থেকে উত্তরণের পাশাপাশি বাজেটে ব্যবসাবান্ধব বাজেট চান ব্যবসায়ী নেতারা।
তারা বলছেন, জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ালেও করোনার পরবর্তী সময়ে দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকটেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এজন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরো সুদৃঢ় ও জোরদার করতে বাজেটে নির্দেশনা থাকতে হবে।
জানতে চাইলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করায় বাজেটকে ঘিরে ব্যাপক প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবারও জনমুখী ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে আশা করছি।”
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, “বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। বাজেটে এসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, “আমাদের দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তিগুলোর জন্য ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট কমিটি করা দরকার। যেখানে বসে ট্যাক্স, পলিসি বা লজিস্টিকস সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলা যাবে। আমরা যদি ১০ বিলিয়নের উচ্চাকাঙ্ক্ষা করি, তাহলে আমাদের জাতীয়ভাবে সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, এসব জিনিসকে ডিজিটালাইজড করা দরকার। তথাকথিত ডিজিটালাইজেশন নয়, বরং ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে।”
অবশ্য খেলাপি ঋণ, ডলার সংকট, বৈদেশিক ঋণসহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। এই সংকটময় সময়ে বাজেটকে ‘সতর্ক’ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এছাড়াও বাজেটে সরকারের বেশিকিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলে আসছেন। তবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও বাজেটে চ্যালেঞ্জ দেখছেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “বাজেটের তিনটি মূল চ্যালেঞ্জ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ধরে রাখা, রাজস্ব ব্যয় সংকোচন করে উন্নয়নমুখী বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়ানো এবং বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর চাপ না ফেলে বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন করা। আমরা মনে করি বিদ্যমান অর্থনীতির রূপান্তরের সময়ে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পায়ন ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, অটোমেশন, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ বিবেচনা করা প্রয়োজন।”