দেশের কোথায় বা কোন খাতে কত আয়-ব্যয় হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে প্রতি অর্থবছরে বাজেট পাস করা হয়। স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেট থেকে শুরু করে এ যাবৎ যত বাজেট হয়েছে দেশে, সব কটিরই আকার বেড়েছে। সবশেষ চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে স্বাধীনতার ৫২ বছরের ব্যবধানে ৯৬৯ গুণ বড় বাজেট প্রস্তাব করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি ছিল মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন। জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়।
এর আগে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড গড়েন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার আগে বাংলাদেশে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে আবদুল মুহিত টানা ১০ বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসাবে মুহিতের উপস্থাপন করা বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এ ছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাজেটের আকার এবং অর্থমন্ত্রীর তালিকা-
১. ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৭৮৬ কোটি টাকা (তাজউদ্দীন আহমদ)
২. ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে ৯৯৫ কোটি টাকা (তাজউদ্দীন আহমদ)
৩. ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ১০৮৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা (তাজউদ্দীন আহমদ)
৪. ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে ১৫৪৯ দশমিক ১৯ কোটি টাকা (ড. আজিজুর রহমান)
৫. ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে ১৯৮৯ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা (মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান)
৬. ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ২১৮৪ কোটি টাকা (লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান)
৭. ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা (রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান)
৮. ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ৩৩১৭ কোটি টাকা (ড. এম এন হুদা)
৯. ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে ৪১০৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
১০. ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে ৪৬৭৭ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
১১. ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ৪৭৩৮ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
১২. ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে ৫৮৯৬ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
১৩. ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে ৬৬৯৯ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)
১৪. ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ৭১৩৮ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)
১৫. ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে ৮৫০৪ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)
১৬. ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ৮৫২৭ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)
১৭. ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ১০৫৬৫ কোটি টাকা (মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম)
১৮. ১৯৮৯-৯০ ১২৭০৩ কোটি টাকা (ড. ওয়াহিদুল হক)
১৯. ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে ১২৯৬০ কোটি টাকা (মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম)
২০. ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ১৫৫৮৪ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
২১. ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১৭৬০৭ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
২২. ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৯০৫০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
২৩. ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে ২০৯৪৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
২৪. ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ২৩১৭০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
২৫. ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ২৪৬০৩ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)
২৬. ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ২৭৭৮৬ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)
২৭. ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ২৯৫৩৭ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)
২৮. ১৯৯৯-০০ অর্থবছরে ৩৪২৫২ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)
২৯. ২০০০-০১ অর্থবছরে ৩৮৫২৪ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)
৩০. ২০০১-০২ অর্থবছরে ৪২৩০৬ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)
৩১. ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
৩২. ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৫১৯৮০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
৩৩. ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৫৭২৪৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
৩৪. ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬১০৫৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
৩৫. ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৬৯৭৪০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)
৩৬. ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯৯৯৬২ কোটি টাকা (এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম)
৩৭. ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯৯৯৬২ কোটি টাকা (এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম)
৩৮. ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৩৯. ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৩২,১৭০ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪০. ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৬৫,০০০ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪১. ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪২. ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪৩. ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা
৪৪. ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা
৪৫. ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪৬. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪৭. ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)
৪৮. ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)
৪৯. ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)
৫০. ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)
৫১. ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)
৫২. ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)
সর্বশেষ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এতে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দেশে চলমান রিজার্ভ সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কেমন বাজেট পরিকল্পনা করেছেন, তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।
এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এ উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নে গত ১৪ মার্চ নির্দেশনা দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সব বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে এডিপির জন্য মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও প্রকল্প ঋণ-অনুদান ৯১ হাজার ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
পরে অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপির আকার দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণপূর্বক কার্যক্রম বিভাগকে অবহিত করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের টার্গেট এক লাখ কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এডিপিতে এক অর্থবছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।