• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘আমলাতন্ত্র ভেঙে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
‘আমলাতন্ত্র ভেঙে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে’
‘বাজেট ও যুব সমাজের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। ছবি : সংগৃহীত

দেশের আমলাতন্ত্রকে ভেঙে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেছেন, “জাতীয় বাজেটকে গণবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী করতে হলে তেভাগা পদ্ধতিতে যেতে হবে। তেভাগা মানে হলো, প্রথমত উৎপাদনমুখী, দ্বিতীয়ত ভৌত-কাঠামো এবং তৃতীয়ত সামাজিক উন্নয়ন। এ পদ্ধতিতে আমলানির্ভর ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে। তার জন্য অংশগ্রহণ ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।”

শুক্রবার (১৭ মে) সকালে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের উদ্যোগ ‘বাজেট ও যুব সমাজের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

এম এম আকাশ বলেন, “অসৎ আমলা, অসৎ রাজনীতিবিদ ও অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে বামপন্থী শক্তিদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি খান আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নুর সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন।

সেমিনারে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবীব ইমন।

সেমিনার পেপারে বলা হয়, যুবকরাই বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করছে। উন্নয়নের সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু সরকার প্রবৃদ্ধির আসক্তিতে আচ্ছন্ন। যেকোনো প্রক্রিয়ায় প্রবৃদ্ধির সূচক সংখ্যা পূরণে সরকারের যে চেষ্টা, তা কি ব্যর্থতা আড়ালের কৌশল? যে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, তা যতই চকচকে হোক না কেন, প্রকারান্তরে তার জোর কম। দেশের কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠীকে কাজের বাইরে রেখে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে তাই বিশাল তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

সেমিনার পেপারে আরও বলা হয়, শ্রমবাজারের সংকট নিয়ে পরামর্শটি হলো, ‘কর্মসংস্থান কমিশন’ গঠন। ওই কমিশন বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব। তা ছাড়া স্বয়ংক্রিয় অনলাইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের নিবন্ধন নিশ্চিত করে, তাদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও চাহিদা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করবে। এ কমিশন দেশে কর্মশক্তিকে ভবিষ্যতের যেকোনো পর্যায়ের জাতীয় এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে তুলতে পারে। না হলে কর্মসংস্থান সংকট থেকে স্থায়ী মুক্তি সম্ভব নয়।

ওই সেমিনার পেপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে ১৬টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।

সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার বার্তা সম্পাদক রাজু আহমেদ, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, হাফিজ আদনান রিয়াদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা সুমা আক্তার, জাতীয় যুব জোটের সভাপতি শরিফুল কবীর স্বপন, বিপ্লবী যুব মৈত্রীর সভাপতি সৈয়দ মাশুক শাহী, বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ সিং, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শুহাইল আহম্মেদ শুভ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “মানুষের দেওয়া কর অনেকাংশেই সরকারের কাছে পৌঁছায় না, ফলে বাজেটে সরকার অনেক ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। বাজেট দেওয়ার পর বরাদ্দের কোনো পরিবর্তন করা হয় না। কিন্তু বাজেট বরাদ্দের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় যে, কোন কোন খাতে বাজেটে বরাদ্দ কাজ করবে না। এই সিন্ডিকেট থেকে বের হতে হবে। শিক্ষা হোক বা কর্মসংস্থান হোক কোথায় বরাদ্দ কাজে লাগাবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যয়ের কতভাগ বাস্তবে জনগণের কাজে লাগছে সেটা বের করা জরুরি।”

গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা বলেন, “বাজেটে গণতান্ত্রিক বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এমন গোপনীয়ভাবে এটা করা হয় যেন সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, “সমাজের যুবকদের একটা বিরাট অংশ নিষ্ক্রিয়। তাদের মধ্যে মাদকাসক্তির একটা প্রভাব বাড়ছে, যা সমাজের জন্য ভয়াবহ। নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। যেমন, গৃহপরিচারিকা, চা-শ্রমিক তারা কর্ম নিয়ে অনিরপত্তার মধ্যে থাকে।”

জোবাইদা নাসরীন আরও বলেন, “যখন তখন কর্মী ছাঁটাইয়ের আন্দোলন জোরালো করতে হবে। শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে যাওয়ার একটা অনীহা দেখা যায়। এর কারণ কর্মক্ষেত্রে অমর্যাদাপূর্ণ অবস্থা। সরকারি চাকরি এখন শুধু স্থায়ী চাকরি নয়, ক্ষমতা, অবৈধ উপার্জন, বিলাসী জীবন এসবের জন্য দায়ী। কর্মক্ষেত্রের সব জায়গাকে সমসম্মানের করতে পারলে এই নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে বের হয়ে আসা যাবে।”

Link copied!