বিএনপির ২৭ দফা যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকৃতির দলিল : ১৪ দল


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০৯:৫৭ পিএম
বিএনপির ২৭ দফা যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকৃতির দলিল : ১৪ দল

বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফার ‘রেইনবো নেশন’ ও ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন’ কমিশনের লক্ষ্য একই বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। দালাল আইন বাতিল করে জিয়াউর রহমানের মতো যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি ও সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল। রেইনবো নেশনের অর্থই হচ্ছে পরাজিত শক্তি, খুনি অপরাধীদের আরেক দফা রাষ্ট্র ও সমাজের স্বীকৃতিদান বলে উল্লেখ করেছে ক্ষমতাসীন এই জোট।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে জোটের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।

আমির হোসেন আমুর নিউ ইস্কাটনের বাসায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

১৪ দল কখনোই একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিদের সঙ্গে ‘রিকনসিলিয়েশনের নামে ‘রেইনবো নেশন’ নামের এই সুচতুর পদক্ষেপ গ্রহণ করে না দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে আমির হোসেন আমু বলেন, “এই দুটি প্রশ্ন বহু আগেই মিটমাট হয়েছে। আবার নতুন করে করার কোনো প্রয়োজন নেই। বিএনপির ২৭ দফার অন্য বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের শাসনামলেরই অভিজ্ঞতা দেশবাসীর আছে। রাষ্ট্র ও জনগণের বিরুদ্ধে বিএনপির এই রাজনীতি জনগণ অতীতে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এবারও করবে। তাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হয়েছে তারাও আমাদের অজানা নয়।”

আমু বলেন, “খুবই ক্ষুদ্র স্বার্থে এক হয়েছেন। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এর থেকে দুরে থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করছি। বিএনপি বর্তমান সরকারের মৌলিক সংশোধনের কথা বলে তারা অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলকে নিষ্কণ্টক করতে চায়। ১৪ দল জোটগতভাবে মাঠে কর্মসূচি পালন করেছিল।”

আগামীর কর্মসূচি সেইভাবে হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জোট সমন্বয়ক বলেন, “আমরা আমাদের রাজনৈতিক ধারা নিয়ে মাঠে থাকব। এই ধারার বিপরীত অবস্থানে বিরোধিতা করব। তারা এর আগে ১০ দফা, ১৪ দফাসহ বিভিন্ন ধরনের দফা দিয়েছিল। এগুলো নতুন কিছু না। তাদের এ আন্দোলন নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।”

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে বিভিন্ন প্রগতিশীল দলেরও অংশগ্রহণ আছে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় বিশ্বাসী বা প্রগতিশীল হলে জামায়াতের সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলন করত না। যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় তারা প্রগতির ধারার মধ্যে আছে বলে মনে করি না।”

রাষ্ট্র সংস্কার রেইনবো নেশনের নামে রাজাকার, জঙ্গি, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের ঐক্যের কালো দলিল বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, “কালো দলিল যারা সমর্থন করছেন তারা আর যা-ই হোক বাম বা প্রগতিশীল ঘরানার লোক হতে পারে না। তারা বিচ্যুত। ২৭ দফা ও ১০ দফা কার্যত বাহাত্তরের সংবিধানকে বানচাল করার সুকৌশল প্রস্তাব। যারা এটা সমর্থন করে তারা গণতান্ত্রিকও না, প্রগতিশীলও না। ২৭ কেন, ২৭০ দফা দিলেও আমলযোগ্য নয়।”

ইনু আরও বলেন, “এখানে রাষ্ট্র মেরামতের নামে কার্যত বাংলাদেশে রাজাকারদের আমদানি করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলনে যদি কোনো রাজনৈতিক নেতা, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হোন কিংবা কোনো বামপন্থী হোন। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির কুলাঙ্গার ঘটে। তার সঙ্গে লেনদেন হতে পারে না।”

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দল মহানগর সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী, জাতীয় পার্টি জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহম্মেদ মুক্তা, গণ আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!