মো. ফজলে হাসান অনিক (২৪), একজন হ্যাকার। তরুণীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করাই তার প্রধান টার্গেট। আইডি হ্যাকড করে ‘স্পর্শকাতর’ ছবি সংগ্রহ করতেন এই যুবক। এরপর তাদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে হাতিয়ে নিতেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। আর সেই অর্থ দিয়ে নিজের পাশাপাশি চালাতেন প্রেমিকার খরচ। অবশেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি।
রোববার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অভিযান চালিয়ে মো. ফজলে হাসান অনিককে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ সময় তার কাছ থেকে অপরাধে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার মো. ফজলে হাসান অনিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাও ইউনিয়নের নেংটাদাহ গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) এই বিষয়ে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) ডিআইজি এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার ফজলে হাসান অনিক গত ২ বছর ধরে অর্ধশতাধিক ভিকটিমের ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছেন এবং ১৫ জনের বেশি ভিকটিমের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একজন ভুক্তভোগী সিআইডি সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ দেন। একই সঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন থেকেও একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার ছায়াতদন্ত করে অপরাধের ধরন ও হ্যাকারকে শনাক্ত করে।”
সিপিসি ডিআইজি বলেন, “গত বছরের আগস্টে ভুক্তভোগীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একটি লিংক আসে। না বুঝেই ওই লিংকে ক্লিক করে ফেসবুক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে। ঠিক তখনই ঘটে বিপত্তি। ভিকটিমের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড চলে যায় হ্যাকারের দখলে। হ্যাকার ভিকটিমের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জার থেকে কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে হ্যাকার ভিকটিমের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও তার আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত লোকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক ধাপে কৌশলে হ্যাকারের পরিচয় গোপন রাখার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেন। এরপরেও যখন টাকার দরকার হতো তখনই ভিকটিমকে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিপিসির ডিআইজি বলেন, “হ্যাকার অনিক ব্ল্যাকমেইলিংয়ের টাকা দিয়ে ঢাকায় নিজের খরচ চালাতেন। তারও একজন গার্লফ্রেন্ড আছে। ওই মেয়ের সমস্ত খরচ তিনি এভাবে আইডি হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইলিং করে চালাতেন। অনিক এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। পুলিশ যাতে ধরতে না পারে, এজন্য তিনি কোনো বিকাশ নগদে টাকা না নিয়ে বিভিন্ন সুপার শপে যেতেনে। শপে কেনাকাটা করে ভুক্তভোগীদের বলতেন বিকাশ বা নগদে বিল দিতে। এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সিতেও টাকা নিতেন তিনি।”
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, “ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট আছে তার। ওই অ্যাকাউন্টে তিনি টাকা নিয়ে নিতেন। যার কারণে তাকে সহজে ট্রেস করা যেত না। আমরা বিভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার করে তাকে ট্রেস করেছি।”