ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে গোপনে ভারতে উড়ে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার মুহূর্তে ঠিক কী কী ঘটেছিল, কীভাবে তিনি দেশ ত্যাগ করেছিলেন-এসব বিষয় নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়ে গেছে। কৌতুহল রয়েছে শেখ হাসিনার শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত নিয়েও।
তবে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ঢাকা ছাড়ার সময় প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে। সেই সঙ্গে ফ্লাইটপথ ও অবস্থান অন্যদের জানাতে চায়নি। সেজন্য বিমানের ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বলে রাখা ভালো, এই ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমেই কোনো বিমানের নাম, অবস্থান, উচ্চতা, গতি এবং স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম জানতে পারা যায়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় আকাশসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ট্রান্সপন্ডার চালু করা হয়নি, বরং বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তবে কেন এমনটি করা হয়েছিল তার সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
ফ্লাইট প্রোগ্রেস স্ট্রিপের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি গত ৫ আগস্ট বিকেল ৩টা ৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এয়ারবেস থেকে উড্ডয়ন করেছিল। যে সময়টির মাত্র ৩০ মিনিট আগে বিক্ষুব্ধ লাখো ছাত্র-জনতা হাসিনার সে সময়ের সরকারি বাসভবন গণভবনে ঢুকে পড়েছিল।
বিমানটি সরাসরি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে না গিয়ে প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করেছিল। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিমানটি দ্রুত বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের আকাশসীমায় যতটা কম সময় থাকা যায় সেটাই ভালো মনে করেছিলেন বিমানের চালক।
তবে শেষ অবধি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা-কলকাতা রুটের ওয়েপয়েন্ট ‘বিইএমএকে’ পৌঁছানোর পর ট্রান্সপন্ডার ও স্বয়ংক্রিয় জিওলোকেটার সিস্টেম চালু করে। আর তারপর থেকেই সেটি রাডারে দেখা যেতে থাকে। ঢাকা বিমানবন্দরে রাডার স্ক্রিনের গ্র্যাব অনুসারে, বিমানটি প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করে। পরে রাজধানী দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটির দিকে যায়।
ঢাকা থেকে দিল্লি যেতে বিমানগুলো সাধারণত রাজশাহীর ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এই রুটে ঢাকা থেকে কলকাতা রুটের চেয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায় কয়েক মিনিট বেশি থাকতে হয়। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানটি সম্ভবত সরাসরি দিল্লি না গিয়ে প্রথমে কলকাতার দিকে যাত্রা করেছিল। এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের আকাশসীমায় যতটা সম্ভব কম সময় থাকতে চেয়েছিল বিমানটি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখান থেকে শেখ হাসিনাকে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় ভারত সরকারের দেওয়া একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসএসএফ সদস্য ও ক্রুরা একদিন পরে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।