রাজধানীতে দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। এতে বাসা-বাড়িতে সময়মতো রান্না করতে পারছেন না অনেকেই। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটারবিহীন পাইপ লাইনের চুলায় গ্যাস না পেলেও প্রতিমাসে দিতে হচ্ছে নির্ধারিত বিল। এতে বিপাকে পড়েছেন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীরাও। কারণ সংকট থাকায় সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে গিয়ে তাদের বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
সব কিছু মিলিয়ে তীব্র এই গ্যাস সংকট নগরবাসীর জীবনে বয়ে এনেছে ভোগান্তি আর দুর্ভোগ।
সরেজমিনে, রাজধানীর বাংলামটর, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ এলাকা ঘুরে জানা গেছে তীব্র এই গ্যাস সংকটের খবর। এলাকাগুলো ঘুরে কথা হয়েছে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।
এসব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্যাস সংকট সবচেয়ে বেশি দেখা দিচ্ছে সকাল ৭ টার পর থেকে। বিকেলের দিকে খানিক সময় গ্যাস পাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর ফের সংকট দেখা দিচ্ছে।
অনেকেই আবার অভিযোগ করছেন, গ্যাস সংকটের কারণে বেড়েছে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম। যদিও গ্রাহকদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিক্রেতারা।
বেলি আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের। তিনি পাইপ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, “কয়েকদিন ধরে গ্যাসের সংকট তীব্র আকারে দেখা দিচ্ছে। চাহিদা মাফিক গ্যাস পাচ্ছি না। কিন্তু প্রতিমাসে ঠিকই বিল দিতে হচ্ছে। সকালে ঠিকমতো রান্না করা যাচ্ছে না। আগে সকালে রান্না বসালে দুপুরের মধ্যে খেতে পারতাম। এখন দুপুরের খাবার খেতে হচ্ছে বিকেলে। আর রাতের রান্না করতে হচ্ছে মধ্যরাতে।”
পান্থপথ এলাকার জুবায়ের হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি গ্যাস সংকটের কারণে কর্মস্থলে না খেয়ে রওনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে অফিসে যাই। আর রুমে ফিরি সন্ধ্যায়। যেখানে সিট ভাড়া নিয়ে থাকি সেখানে নিজেই রান্না করে খাই। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে রান্না বসিয়ে দেই। সেই রান্না রাতে খাই আবার সকালের জন্য রেখে দেই। কিন্তু গ্যাস সংকটে কারণে রাতের রান্না বসাতে পারছি না। আবার রাত জেগে রান্না করলে সকালে অফিস যেতে লেট হবে। তাই গ্যাস সংকটের পরে বাইরেই খাবার খাই। আর দুপুরের খাবার প্রতিদিনের মতো অফিসের ক্যান্টিনে।”
মোহাম্মদপুর এলাকার আরিফের কথাও প্রায় একই রকম। এ সমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “মাস শেষে আমি যে ভাড়া দেই, তাতে গ্যাস বিলটাও আছে। এখন রান্না করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্যাস সংকটের কারণে। তাই দ্রুতই এই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভোগান্তি বাড়বে।”
কারওয়ান বাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী খোকন বলেন, “হোটেলের রান্নার কাজে সিলিন্ডার গ্যাস এবং লাইনের গ্যাস দুটোই ব্যবহার করি। গ্যাস সংকটে সিলিন্ডার গ্যাস বেশি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে লোকসান হচ্ছে।”
পিঠা ব্যবসায়ী শামীম বলেন, “আমার স্ত্রী কয়েকদিন ধরে মধ্যরাতে রান্না করছে। দোকানে সিলিন্ডার গ্যাস চালাই। গত সপ্তাহে সিলিন্ডার গ্যাস কিনছি ১৫০০ টাকায়। আজকে কিনছি ৫০ টাকা বেশি দিয়ে।”
সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রেতা ইমরান আলী বলেন, “কয়েকদিন ধরে সিলিন্ডার গ্যাস বেশি বিক্রি হচ্ছে। যাদের প্রয়োজন ছিল না তারাও এখন কিনছেন। সিলিন্ডারের দাম বাড়েনি। আমরা পাইকারি বিক্রি করছি ১৪০০ টাকা। যারা খুচরা বিক্রি করে তারা হয়তো একশ-দেড়শ টাকা লাভ করছেন।”
গ্যাস সংকট সমাধানের কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “বর্তমানে গ্যাস নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। কয়েকদিন ধরেই গ্যাসের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। আমি মনে করি এই অসুবিধা সাময়িক সময়ের জন্য। প্রচণ্ড শীতের কারণে গ্যাসের চাপ কমে যায়। আমরা আশাবাদী দুই একদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।”