• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফ সাপোর্টে ভুবন, বাইরে ক্লান্তিহীন অপেক্ষা স্বজনদের


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ০৯:১১ পিএম
লাইফ সাপোর্টে ভুবন, বাইরে ক্লান্তিহীন অপেক্ষা স্বজনদের
হাসপাতালে ভুবন চন্দ্র শীলের স্বজনরা। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

লাইফ সাপোর্টে ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও গুলিবিদ্ধ ভুবন চন্দ্র শীলের (৫৫) অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরাও এখনো কোনো আশার খবর দিতে পারছেন না। তার জন্য পরিবারের সদস্যরা ক্লান্তিহীন অপেক্ষা করছেন। ভুবনের স্ত্রী রত্না রানী শীল কিছুক্ষণ পরপর কাঁদছেন। আর স্বামীর জন্য প্রার্থনা করছেন।

চিকিৎসকরা জানান, ভুবন চন্দ্র শীলের এখনো কোনো উন্নতি নেই। তার মস্তিস্ক কাজ করছে না।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

এর আগে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় প্রাইভেটকার আরোহী এক সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালান আরেক সন্ত্রাসী দল। এ সময় ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে তারিক সাঈদ মামুন (৫৪) নামের ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও এক পথচারী।

ভুবন চন্দ্র শীল গোমতী টেক্সটাইল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তার বাসা আরামবাগ। শেওড়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল করে শেওড়া থেকে আরামবাগ যাচ্ছিলেন।

ভুবন চন্দ্র শীলের শ্যালক তাপস মজুমদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “দাদার অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। আমাদের পরিবারের অভিভাবক ছিলেন এই বোনজামাই। কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত কিছু বলতে পারছেন না। বলছেন মস্তিস্ক কাজ না করা পর্যন্ত কিছু বলাই যাচ্ছে না।”

তাপস মজুমদার আরও বলেন, “প্রতিদিন লাইফ সাপোর্ট, মেডিসিন বিলসহ ৯৩ হাজার টাকা বিল আসতেছে। দাদা খুব সামান্য বেতনে চাকরি করত। আমার বোন ও বোনের মেয়ে সবাই গ্রামে থাকে। দাদা এখানে আরামবাগের একটি মেসে থাকতেন। ওনার চিকিৎসার জন্য এত টাকা প্রতিদিন হাসপাতালের ব্যয় নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় আছি।”

ভুবনের স্ত্রী রত্না রানী শীল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা খুব সাধারণ পরিবারের মানুষ। বিনা অপরাধে আমার স্বামী গুলি খেল। স্বামীকে বাঁচানোর এত টাকা কই পাবো? আবার স্বামীকে বাঁচাতে না পারলে আমাদের মেয়ের কী হবে।”

এই ঘটনায় বিচার চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রত্না রানী শীল বলেন, “বিনা অপরাধে আমাদের পরিবারের এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল, সরকারের কেউ একবার খোঁজ নিল না। তাহলে কার কাছে বিচার চাইব। ঘটনার পর পুলিশ বলল, আপনারা মামলা করেন। পরে অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করি।”

ভুবন চন্দ্র শীলের ভাবি জয়শ্রী রানী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “তাদের বাড়ি নোয়াখালীর সদর উপজেলায়। বর্তমানে মতিঝিলের আরামবাগে একটি মেসে থাকেন তিনি। তার পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকেন। রাতে পুলিশের মাধ্যমে তারা খবর পান, ভুবন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা গ্রাম থেকে রওনা হয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে ভুবনকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। তখন তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সে থেকে এখনো লাইফ সাপোর্টেই আছে।”

লাইফ সাপোর্টের ইনচার্জ ডা. ইমন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কন্ডিশন এখন পর্যন্ত ভালো না। এখনো মস্তিস্ক কাজ করছে না। তার দ্রুত অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা অস্ত্রোপচারের উপযোগী নেই। মস্তিস্ক কাজ করলে গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সিটি পেট্রোল পাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝামাঝি এলাকার মূল সড়কে এই ঘটনা ঘটে। বিজি প্রেসের ওপর পাশে রয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান সড়ক হওয়ায় এর আশপাশে কোনো দোকানপাট নেই।

বিজি প্রেসের মূল ফটকে থাকা নিরাপত্তা রক্ষী কামরুল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ওইদিন রাতে আমি এখানে ডিউটিতে ছিলাম না। আরেক সহকর্মী ছিলেন, তার কাছ থেকে শুনেছি রাতে গোলাগুলি হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।”

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গত সোমবার রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সিটি পেট্রলপাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝামাঝি প্রধান সড়কে পৌঁছালে চারটি মোটরসাইকেলে করে সাত–আটজন প্রাইভেট থামিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। হামলাকারীরা চারটি মোটরসাইকেলে এসে জামিনে মুক্ত থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে বহনকারী প্রাইভেট কারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে এক মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল মাথায় গুলিবিদ্ধ হোন। এসময় মামুন প্রাইভেট কার থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টার সময় তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়।”

মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, “মামুন প্রায় ২৬ বছর জেল খেটে কয়েক মাস আগে জামিনে বেরিয়েছেন। তার দুই সহযোগীকে নিয়ে প্রাইভেট কারে যাওয়ার সময় অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের ওপর হামলা করে থাকতে পারে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এই ঘটনার গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করেছে। এখনো পুলিশ হামলাকারীদের কাউকে আটক করতে পারেনি। মামলার তদন্ত চলছে।”

Link copied!