আজ পয়লা বৈশাখ। ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। বাঙালির সার্বজনীন লোকউৎসব। অতীতের সব সংকীর্ণতা, গ্লানি, কুপমুণ্ডকতা পরিহার করে নতুনকে বরণের মধ্য দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ করা হবে। জরা-জীর্ণ, পুরাতন সবকিছু আজ ভেসে যাবে- নতুন সূর্যের আলোয়। আজ আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হবে নতুন বছরকে।
অতীতের সব ভুল-ত্রুটি আর ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির ডাকে সাড়া দিয়ে বর্ষবরণের উৎসবে মেতে উঠবে গোটা দেশ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় সামিল হবেন হাজারো মানুষ। গান, কবিতা, আবৃত্তি, নৃত্যসহ বর্ণিল সব আয়োজনে মুখর হয়ে উঠবে পয়লা বৈশাখের সব আয়োজন।
প্রতিবছরের মতো এবারও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই জেগে উঠবে রমনার বটমূল। বাঁশির সুরে নতুন সকালকে আহ্বান জানানো হবে। বাঙালির ঐতিহ্যের সব রঙ, অনুভূতি, আবেগ মিশে যাবে বর্ষবরণের বর্ণিল আয়োজনে। রাজধানীসহ গোটা দেশেই আবহমান বাংলার লোকজ উৎসবে মেতে উঠবে।
জাঁকজমকভাবে ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩১’ উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারি ছুটির দিন আজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করবে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ভোরে রমনার বটমূলে যথারীতি থাকবে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশনে শুরু হবে উৎসব। পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও করবে বর্ষবরণ।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাঙালি জাতির সুখ সমৃদ্ধি আর সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এবার বর্ষবরণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, বৈশাখের আগমনে বেজে ওঠে নতুনের জয়গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে নব আনন্দে, নব উদ্যমে। ফসলি সন হিসেবে মোগল আমলে যে বর্ষ গণনার সূচনা হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা আজ সমগ্র বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ আমাদের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে।
বর্ষবরণ ঘিরে মহানগরীতে যাতায়াত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ)। নির্দেশনায় বলা হয়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রমনা বটমূল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন করে দেয়া হবে।
মূলত, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতানার বহিঃপ্রকাশ ঘটে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে। তাই বর্ষবরণ শুধু আনুষ্ঠানিক উৎসবই নয়, বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহকও। উৎসবের পাশাপাশি রাজনৈতিক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর এসে এ শোভাযাত্রা বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয় ইউনেস্কো।