নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যু দিবস আজ। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম তার। ১৯৩২ সালের একই দিনে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। নারীমুক্তিতে অনন্য ভূমিকার জন্য দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রাম বেগম রোকেয়ার আতুড়ঘর। এখানে আছে তার বাবার পৈতৃক জমিদারি সম্পত্তি, পূর্বপুরুষদের সমাধি। প্রতিবছর সরকারিভাবে পালন করা হয় তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস। যাকে ঘিরে এত আয়োজন অথচ তার সমাধি নেই এখানে। তার দেহাবশেষ পড়ে আছে ভারতের কলকাতার সোদপুর নামের এক গ্রামে। গত দেড় যুগ ধরে পরিবারের দাবি, সীমান্তের ওপার থেকে তার দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সেই দাবি চিঠি চালাচালিতে চাপা পড়ে আছে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নারীদের রোকেয়া পদক দেওয়া হয়। নারী কল্যাণ সংস্থা ১৯৯১ সাল থেকে এই নামের একটি পদক প্রদান করা শুরু করে। সরকারিভাবে ১৯৯৬ সাল থেকে এই পদক প্রদান করা হয়। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা নারীদের রোকেয়া দিবস উদযাপন ও রোকেয়া পদক প্রদান করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নারীদের উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করায় বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, বেগম রোকেয়ার কর্ম ও জীবনাদর্শের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথেÑ বেগম রোকেয়া দিবসে আমি এ প্রত্যাশা করি। তার চিন্তা-চেতনায় ছিল আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা ও মানবতাবোধ। বস্তুত তার সমগ্র সাহিত্য সাধনা ও লেখালেখির মূল বিষয় ছিল নারীর প্রকৃত শক্তির উন্মেষ ঘটানো ও নারীকে অধিকার সচেতন করে তোলা।
প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, নারী জাগরণের পথিকৃত, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার অবদান অবিস্মরণীয়। বেগম রোকেয়া ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে তার ক্ষুরধার লেখার মাধ্যমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পাই।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে পায়রাবন্দের রোকেয়া মেলায় তার দেহাবশেষ এনে নিজ গ্রামে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করার দাবি তুলেছিল পরিবার। তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক সেই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ২০১০ সালে তার পরিবার ও স্থানীয়দের বিভিন্ন দাবিসংবলিত একটি লিখিত আবেদন সরকারের সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান। এরপর দীর্ঘসময়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বরে কলকাতায় মৃত্যু হলে বেগম রোকেয়াকে কলকাতা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী পানিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়। তখন তাকে কলকাতায় দাফনে বাধা দিয়েছিল সেখানকার রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ। শেষপর্যন্ত বেগম রোকেয়াকে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের বন্ধু ব্যারিস্টার আব্দুর রহমানের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়
তিনি বলেন, সোদপুরের পানিহাটিতে তার কবরটি বহু বছর ছিল সবার অজানা। পশ্চিমবঙ্গের স্পিকার মনসুর হবিবুল্লাহ নব্বইয়ের দশকে উদ্যোগী হন রোকেয়ার কবর সঠিকভাবে শনাক্ত করতে। পানিহাটি পৌরসভার পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটে রোকেয়াকে সমাহিত করার স্থানটির সন্ধান মেলে। ১৯৯৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বদরুদ্দীন উমর রোকেয়ার কবরে একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন।
এদিকে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্ম ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার রংপুরে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষক, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হবে।