২০৪১ সালের বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “৪১ সালে উন্নত দেশ হবে। প্রত্যেকেই ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট বিজনেস, স্মার্ট হেলথ, স্মার্ট এডুকেশন—আমাদের গভারনেন্স হবে স্মার্ট।”
রোববার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী পাট ও পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
মেলা উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা পরিবার হারিয়ে এ দেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা সেটাই করেছি “
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের কাছেও একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। আমরা বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মর্যাদাশীল ‘উন্নয়নশীল’ দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশে’ পরিণত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এই মেলা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পণ্য বহুমুখীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমি মনে করি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত তিন বছরে সমগ্র বিশ্ব ভয়ানক করোনাভাইরাসের সম্মুখীন হয়েছে, যা কার্যত ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও আমাদের সরকারের সময়োপযোগী ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে এবং প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রমের গতিশীলতা বজায় রাখা হয়েছে।”
এর আগে মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “স্থায়ী এক্সিবিশন সেন্টার একটু দূরে হলেও মেলায় অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মেলার মাধ্যমে আমরা দেশে তৈরি পণ্য দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাই। বাংলাদেশে তৈরি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরাই মেলার মূল লক্ষ্য।”
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা দেশের অভ্যন্তরে ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেবলমাত্র টাকার অংকে মুনাফা করার উদ্দেশ্য মেলার আয়োজন করা হয় না। গতবছর মেলায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানির স্পট আদেশ পাওয়া গিয়েছিল। প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরও ১০টি পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইসিটি খুবই সম্ভাবনাময় পণ্য, স্বল্পতম সময়ে এ খাতের রপ্তানি ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে আশা করছি।”
টিপু মুনশি জানান, মেলায় যাতায়াতে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য গতবারের মতো সার্টেল বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। কুড়িল বিশ্ব রোড হতে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। প্রয়োজনে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলাকালীন বাস চলাচল করবে।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এবারে মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকেট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টের সুযোগ রয়েছে।
মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে। এবার মেলায় দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।