বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার দাবি, প্রতিষ্ঠানটি এখন সমবায় সমিতির মতো কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির মতবিনিময় সভায় তিনি এ দাবি করেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক এতো ভালো করছে যে, লোকজনের ১২টা বাজতেসে। প্রথমত হলো সুশাসনের অভাব। সোজা কথা। এখন ব্যাংকের মালিক, রাজনীতিবীদ, ব্যবসায়ী একাকার হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নেই। আমাদের দেশে যারা ব্যাংক ওউন করবে, তারাই তো চালাবে সব।”
সভায় বক্তারা বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন, সংকট আরও বাড়াচ্ছে। সংকট সমাধানে তাদের পরামর্শ অস্থায়ী ব্যাংকিং কমিশন গঠনের।”
সিপিডির পর্যালোচনা বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে অবলোপন, পুনঃতফশিলসহ এ খাতে মোট ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ঋণ আমানতের অনুপাত বেড়েছে, কমেছে নগদ অর্থের তারল্য, বেড়েছে মূলধর ঘাটতিও। মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাঁধে ৪৯ শতাংশ। যা ১২ বছর আগে ছিল ৩১ শতাংশ।
সভায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক জানান, ইসলামী ব্যাংকগুলোর মালিকানা বদলের পর তাদের সূচকগুলো নিম্নমুখী হয়।
আলোচকরা বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে, ব্যাংক পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।”
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের দূরদৃষ্টির অভাব দেখছেন আলোচকরা। তারা বলেন, “২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশে নামাতে, ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার জরুরি।”
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, “ব্যাংকের যে ইন্সপেকটর মাঠে গিয়ে যে কাগজ প্রক্রিয়া করে দেয়, হি ক্যান লিড পার্মানেন্ট ড্যামেজ ইন দ্যা সিস্টেম। এটা আমরা ওভারলুক করি বা পারি না ফলো করতে। ওখানে যদি শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো, আন্ডার ডিউ প্রসেস, তাহলে হয়ত এই প্রবণতাটা কিছুটা কমার সম্ভাবনা ছিল।”
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক একটা শক্ত সমর্থন থাকবে। সেই কমিটি তিন মাস কাজ করে কিছু রোড ম্যাপ দেবে এবং সেটাকে পরবর্তীতে একেবারে সময় সময় ফলোআপ যাতে করা হয়।”
ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা সম্পদের মান নিশ্চিতে মর্টগেজ ডাটা ব্যাংক করার পরামর্শ দেন গবেষকরা।