• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকায় বাহারি আয়োজন


সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকায় বাহারি আয়োজন

আজ পবিত্র শবে বরাত। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন মুসলমানরা সারা রাত ইবাদত বন্দেগীর মধ্য দিয়ে কাটান। তবে পুরান ঢাকাবাসীর কাছে রাতটি ধর্মীয় ইবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন হিসেবেও পালিত হয়।

বাঙালির উৎসবে প্রধান অনুষঙ্গ খাবার। আর মুখরোচক খাবার মানেই পুরান ঢাকা। শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন থাকে। এরই অংশ হিসেবে রুটির পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। শবে বরাতে এই রুটি আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আদান-প্রদান করা হয়। ইবাদতের পাশাপাশি নানা ধরনের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন এলাকাবাসী।

উৎসবের কেন্দ্র পুরান ঢাকার মুসল্লিদের কাছে ঈদের পরই শবে বরাতের রাত অন্যতম। তাদের কাছে এই রাত উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে হালুয়া-রুটি। এ রাতের খাবার হিসেবে থাকে ঐতিহ্যবাহী নকশী রুটি বা ফেন্সি রুটি। যা রুমালি রুটি বা শবে বরাতি রুটি নামেও পরিচিত। বছরের এই একদিনই সাধারণত বিক্রি হয় বিশেষ এই রুটি।

পুরান ঢাকার চকবাজারের মূল সড়কের পাশাপাশি গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন রোড, লোহারপুল মোড়, নাজিরাবাজার, কলতাবাজার, নারিন্দা মোড়, বেগমগঞ্জ, সূত্রাপুর, মালিটুলা মোড়, রায় সাহেবের বাজারে শবে বরাতে সামিয়ানা টাঙিয়ে হালুয়া-রুটির বিকিকিনি হয়।

এছাড়া এ রাতকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী কনফেকশনারির দোকানগুলোতেও ফেন্সি রুটি বা নকশী রুটি পাওয়া যায়। এসব খাবারের ঘ্রাণ ও স্বাদ নিতে রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মিরপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন ভিড় জমান।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শবে বরাত উপলক্ষে ফেন্সি রুটি কেজিপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুল ও মাছ আকৃতির বাহারি নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ রুটি। শবে বরাতের দিনে পুরান ঢাকার প্রতি গলিতেই বিভিন্ন বেকারি কিংবা কনফেকশনারি সামনে ফেন্সি রুটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ফেন্সি রুটি দিয়ে খাওয়ার জন্য পাশাপাশি বিক্রি করা হয় বুটের ও গাজরের হালুয়া। হালুয়া বাটিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

স্থানীয়রা জানান, ঊনিশ শতকের শেষের দিকে ঢাকার নবাবদের হাত ধরে শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। মোগল আমল থেকেই খাবারের এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। নবাবরা বেশ ঘটা করেই শবে বরাত পালন করতেন। সেসময়ে আলোকসজ্জা করা হতো। পাশপাশি মিষ্টি বিতরণ করা হতো। এখন বাংলাদেশে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার অলিগলিতে দোকানিরা বিভিন্ন ধরনের রুটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একেক রুটিতে একেক রকম নকশা করে তাতে বিভিন্ন কিছু ফুটিয়ে তোলা হয়। এগুলোর কোনোটা মাছের মতো, আবার কোনোটা কুমিরের মতো। এছাড়াও দোকানগুলোতে গোলাকার, নকশা করা এবং ফুলের আকৃতিতে বানানো অসংখ্য নকশার রুটি পাওয়া যায়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য ধরেই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এই নকশা রুটি। শবে বরাতে এই রুটি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও পাঠানো হয়। বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়িরা তার মেয়ে-জামাই বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রুটি পাঠান।

গেন্ডারিয়া মোড়ে সামিয়ানা টাঙিয়ে খাবারের পসরা সাজিয়ে বসা কবির হোসেন সংবাদ প্রকাশকে জানান, রুটি তৈরিতে ময়দার সঙ্গে দুধ, ডিম, ঘি, কিসমিস, সাদা তিল ও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও হালুয়ার মধ্যে রয়েছে পেঁপে, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ময়দা, সুজি, গাজরসহ বিভিন্ন প্রকারের হালুয়া।

ক্রেতারা জানান, শবে বরাত উপলক্ষে এ রুটি কেনার চল রয়েছে তাদের মধ্যে। পরিবার-পরিজন নিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী, আত্মীয়দের বাসায়ও পাঠানো হয় ঐতিহ্যবাহী ফেন্সি রুটি।

রায়সাহেব বাজারে কুসুম কনফেকশনারির মালিক আহমদ শরীফ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “শবে বরাত উপলক্ষেই আমরা বিশেষ ধরনের এই রুটি বানিয়ে থাকি। সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেছি, বেচাকেনা ভালোই চলছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি, তারপরও রুটির কেজি ক্রেতার নাগালের কাছাকাছি রাখা হয়েছে।”

Link copied!