• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাটকীয়তায় সরব ছিল আওয়ামী লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২২, ০৯:৫৭ পিএম
নাটকীয়তায় সরব ছিল আওয়ামী লীগ

বিদায়ী বছরে দেশের রাজনীতিতে অনেক পটপরিবর্তন হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে বিদায়ী বছরে সরগরম ছিল দেশের রাজনীতিক অঙ্গন। পাশাপাশি এই অঙ্গনে ছিল নানা নাটকীয়তা আর আলোচনা-সমালোচনা। শুধু তাই নয়, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে চলতি বছরে সংগঠন গোছানো দলের সম্মেলন ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে পুরো বছরজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করেছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। তবে সবমিলিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে সরকারি দলটিতে।

রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ

২০২২ সালের শুরুতে অনেকটাই নীবর ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। কিন্তু রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যখনই সরব হয়ে উঠে, তখনই রাজনীতির মাঠে নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো। গোটা আগস্ট মাসে জাতীয় শোকের মাসেও নেতারা অনেকটাই বাধ্য হয়ে শোক দিবসের কর্মসূচির নামে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। তবে বছরের শেষ সময়ে দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠন ও দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এতে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

চাঙ্গা ছিল আওয়ামী লীগ

বছরের শুরুটায় রেশ ছিল মহামারি করোনাভাইরাসের, তবে শেষ দিকে দলের ইউনিট, ওয়ার্ড থানা উপজেলা ও জেলা সম্মেলন ঘিরে ছিল বেশ চাঙ্গা। দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষ করার পাশপাশি রাজপথে সরব উপস্থিতি ছিল বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি ঘিরেও। টানা চতুর্থবারের মত রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সব জায়গায় শক্তিশালী দল গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তবে বছরের দ্বিতীয় ভাগে এসে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যন্ত চাঙা হতে শুরু করে দলটি। গেল ২৪ ডিসেম্বর ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো সম্মেলন শেষ করে আওয়ামী লীগ। এসবের পাশাপাশি দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য যেমন কঠোরতা দেখিয়েছে, তেমনি বছর শেষে ক্ষমাও করেছে দলটি। গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী মুরাদ হাসান যার মধ্যে আলোচিত নাম। ২৪ ডিসেম্বরের আগে ছাত্রলীগ ও কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনও শেষ করা হয়। বছরের শেষ দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরে তিনটি জেলায় সমাবেশে সশরীরে উপস্থিত হয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন নেতা-কর্মীদের। তাদের দিয়েছেন আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোটের বার্তাও। দল গোছানোর পাশাপাশি বছরের শেষ দিকে বিএনপি জামায়াতের তৎপরতা মোকাবিলায় রাজপথেও সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আগামী বছরে তাদের দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। লক্ষ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মত জয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সাম্প্রদায়ক অপশক্তি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল বিশ্ব অর্থনীতি। এসব চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করেই শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা এইসব পরিস্থিতি থেকে উত্তোলন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির যে এই সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের রাজনীতি, দেশ বিরোধী অপতৎপরতা, সেই চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে চাই। বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আগামী বছর তাই তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে রাজপথ দখলে রাখায় হবে ক্ষমতাসীন দলটির মূল চ্যালেঞ্জ।

কর্মসূচির নামে মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ

করোনার কারণে গত দুই বছর জেলা, উপজেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন, বর্ধিত সভা ও যৌথ সভা করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে চলতি বছর ঢাকা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, ভোলা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বরগুনা, কুমিল্লা মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ, জামালপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মাগুরা, নওগাঁ, নাটোর, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ ৩৯টি সাংগঠনিক জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, শতাধিক উপজেলা ও বেশ কয়েকটি মহানগরের সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূলের এসব সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সারা দেশে বিএনপির যেকোনো কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘদিন পর বিএনপির কোনো কর্মসূচি ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় দলটির সভাপতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতার বক্তব্যে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেন। তার এমন নির্দেশনার পর রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।

করোনা প্রাদুর্ভাবে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল

বিশ্বস্যাপী মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে চলতি বছরের শেষ দিকে বেশকয়েকটি বিভাগীয় শহরে জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহাসমাবেশে নৌকা প্রতীকে আবারও ভোট চেয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা। চলতি বছরে সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানা-পর্যায়ের সম্মেলন করেছে দলটি। তবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ।

মাঠ ছিল স্থিতিশীল

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে সর্বশেষ যে দুটি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে, সে সময়টায় দেশের রাজনীতির মাঠ ছিল অনেকটাই শান্ত বা স্থিতিশীল। তখনকার নতুন কমিটিকে দায়িত্ব নিয়েই ভোটের মাঠে দৌড়াতে হয়নি। মোকাবিলা করতে হয়নি বিরোধী দলের আন্দোলন-কর্মসূচি। সেদিক থেকে এবারের সম্মেলনটা হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এক বছর পরই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনমুখী রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর বিরোধী দলও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয়। এমন একটা অবস্থার মধ্যে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৪ ডিসেম্বর (শনিবার)। নতুন গঠিত কমিটিকে দৌড়াতে হবে নির্বাচনের পথে। একইসঙ্গে বিরোধী দলের আন্দোলনও মোকাবিলা করতে হবে। ফলে নির্বাচন ও আন্দোলন মোকাবিলার লক্ষ্য সামনে রেখেই এবারের সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ও আন্দোলন মাথায় রেখেই বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত তৃণমূলের নেতাদের সম্মেলনের আগ দিয়ে সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে খুব একটা পরিবর্তন না করেই স্বপদেই রাখা দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের।

২০২২ সাফল্যের বছর আওয়ামী লীগের

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০২২ সাল করোনার সংকট মোকাবিলার বছর হিসেবে নিতে পারি। করোনা সংকটের পর অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছিল, পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেটি আরও গভীর হয়। তারপরও ২০২২ সাল শেখ হাসিনার সরকারের একটি অনবদ্য ও সাফল্যের বছর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। কারণ, এ বছরই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। নেতারা বলছেন, চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি একটি ষড়যন্ত্র করেছিল। জনগণ তা সফল করতে দেয়নি। বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে সব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশের অর্জন। ২০২২ সালে বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনটি সমাবেশে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ

বছরের ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। করোনা-পরবর্তী সময়ে যশোরে জনসভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারমধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে উত্তেজিত ছিল রাজনীতির মাঠ, ছাত্রলীগের ৩০ তম সম্মেলন ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

১০ ডিসেম্বর রাজনৈতিক উত্তেজনা

চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে ছিল রাজনৈতিক উত্তেজনা। সেদিন ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে শুরু থেকেই চলছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার যুক্তি-তর্ক। শুরুতে সরকার বিএনপিকে সমাবেশের জন্য ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়। কিন্তু সেখানে সমাবেশ করতে রাজি হয়নি বিএনপি। তারা (বিএনপি) নয়াপল্টনের রাস্তায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল। সমাবেশের চার দিন আগেই বিএনপির নয়াপল্টন অফিসে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।এরপর সরকারের কাছে নতুন স্থানের আবেদন করে বিএনপি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি পায় দলটি। সেখানেই ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্রলীগের ৩০ তম সম্মেলন

৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দিন নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মাহনগর (উত্তর-দক্ষিণ) ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।

মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গত ২৬ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান মেহের আফরোজ চুমকি এবং সাধারণ সম্পাদক হন শবনম জাহান শিলা।

সভাপতিমণ্ডলী সভা করেছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর সভাপতিম-লীর প্রথম সভা ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এটি আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটির প্রথম সভা। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিদ্রোহীদের কাছে কোণঠাসা মনোনীতরা

চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিদ্রোহীদের দাপট। এ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল বিদ্রোহীদের দাপট আর তৃণমূলের পাঠানো তালিকায় অনিয়ম। সব মিলিয়ে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছর। সেই নির্বাচন নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ।

বিনা ভোটে বিজয়ীদের নিয়ে অস্বস্তি

চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর সারাদেশে দলীয় প্রতীক নৌকা ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। ভোলা ও ফেনী জেলার সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। ২৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। নির্ধারিত সময়েই দলের কাউন্সিল হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃণমূল সুসংগঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ২০৪১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অডিও কেলেঙ্কারি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

অডিও কেলেঙ্কারিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলীয় পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান আবারও জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক পদ ফিরে পেতে সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তিনি লিখিত আকারে এ আবেদন করেন। তিনি জামালপুর-৪ আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য। কিন্তু গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। একইদিন তাকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২২ সাল করোনার সংকট মোকাবিলার বছর হিসেবে নিতে পারি। করোনা সংকটের পর অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছিল, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেটি আরও গভীর হয়। তারপরও ২০২২ সাল শেখ হাসিনার সরকারের একটি অনবদ্য ও সাফল্যের বছর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।

অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নে রেকর্ড

মহান স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন, দেশের গৌরব আর সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রো যোগাযোগে আশা জাগানিয়া মেট্রোরেলসহ এমন আরও অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের সফল সমাপ্তির মাধ্যমে বছরজুড়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চমক দিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা রেকর্ড গড়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নেওয়ার মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তবে করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও। এ নিয়ে সরকার বিচলিত না হলেও সতর্কভাবে মোকাবিলা করার ছক কষতে হচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও কমেছে অগ্রযাত্রার গতি। তবে সংকট কাটিয়ে ছন্দ ফিরে পেতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারেরও।  

চমক মেট্রোরেল

রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পনায় তরুণ প্রজন্মের আশা জাগানিয়া প্রকল্প মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা নগরীতে বহুল আকাঙ্ক্ষিত নতুন এ গণপরিবহন ছুটতে শুরু করলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন। তিনি প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়েছে এই মেট্রোরেল। সাধারণের চলাচলের জন্য বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক এ ট্রেন চলাচল শুরু করেছে ২৯ ডিসেম্বর থেকে। প্রথম দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে ছুটবে মেট্রোরেল। জাপান সরকারের অর্থায়নে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ডিএমটিসিএল।

বড় চমক পদ্মা সেতু

দুর্নীতির মিথ্যা অজুহাত তুলে যখন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে থেকে সরে আসে তখন অনিশ্চয়তার কালো মেঘ গ্রাস করে প্রকল্প বাস্তবায়নে। পুরো দেশ যখন হতাশ, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন, নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব, তা কেউ-ই তখন বিশ্বাস করেননি। কিন্তু একজন শেখ হাসিনা করে দেখিয়েছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেছেন। তার ক্যারিশম্যাটিক ও দূরদর্শী লিডারশীপের মজবুত ভিত প্রমাণ আরও একবার দেখিয়েছেন। গত ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। পরের দিন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পদ্মা সেতু বাঙালির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি এই সেতু বাঙালির জীবনের একটি বড় অর্জন। এই সেতুর সাথে মিশে আছে ১৭ কোটি বাঙালির সুখ-দুঃখ আর আর্থ-সামাজিক মুক্তির সোপান। স্বাধীনতার মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছেন বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন ‘স্বাধীনতা’। আর স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও নিজেদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখানোর মতে দুঃসাধ্য কারও ছিল না। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় বাজেটের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখানোর সেই দুঃসাধ্য দেখালেন বঙ্গবন্ধুরকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু এখন বাঙালির কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল সোনালী অহংকার। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প। এ প্রকল্পের সাথে মিশে ছিল বাঙালির অস্তিত্ব, টিকে থাকার সংগ্রাম। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এ সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর আকে পাড় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একইসঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু টানেল

আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অর্জনগুলোর মধ্যে আরও একটি প্রকল্পের সফল সমাপ্তি দেখছে বিশ্ব। বাংলাদেশে তো বটেই, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় নেই নদীর তলদেশে টানেল। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে রেকর্ড গড়লো। এরই মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের একটি টিউব গত ২৬ নভেম্বর উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ সরকারেরর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো টানেল জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। টানেলের অভ্যন্তরে ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে ৭ শতাংশ কাজ। চীনের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। অবশিষ্ট টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার।

অভূতপূর্ব মানবিক কর্মকাণ্ড ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’

শুধু উন্নয়ন পরিক্রমা নয়, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ যাতে নিজের ঘর পায়, থাকার জায়গা হয়; সেজন্য অভূতপূর্ব যে মানবিক কর্মকা- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেছিলেন, ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়নে রূপ দিয়েছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করেছেন। এর মাধ্যমে আপন নীড় পেয়েছে ৪৯২টি উপজেলার এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জন মানুষ। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এই ৬৭ হাজার ৮০০ ঘরের মধ্যে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকি আট হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ পর্যন্ত এক লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার ওপর ছাদ পায়। আর গত বছরের ২০ জুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবার ঘর পায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে মোট পাঁচ লাখ নয় হাজার ৩৭০টি পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

 

Link copied!