আগস্ট মাস এলেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা দেশবিরোধী চক্রান্তে মেতে ওঠে। এজন্য মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।
দলটির নেতারা বলছেন, আগস্ট মাস আসলেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়। এজন্য সতর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার সকল অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ষড়যন্ত্রকারীরা যেন তাদের হীন স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে অংগ সংগঠনসহ সকল আওয়ামী লীগ কর্মীদের।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ১৪দলীয় জোট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগস্ট মাস এলেই আওয়ামী লীগ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “আগস্ট আসলে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। দলের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের ৭৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছি আগস্টে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শোকের মাসে সব কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে হবে।” এই নেতা বলেন, “আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে ঘাতকচক্র। আর এই আগস্ট মাসেই ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান টার্গেট করে। এই চক্র একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলা করা হয়েছিল। এমনকি গত বছর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরিকল্পনা ছিল, আমরা সতর্ক ছিলাম বলে কার্যকর করতে পারেনি।”
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই তারা নানা চক্রান্ত করছে। সে কারণে বিএনপিকে নিয়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে তারা। দলটির নেতারা বলেন, যেখানে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন হবে, সেখানেই মোকাবিলা করা হবে। নাশকতা করা হলে রাজপথে মোকাবিলা করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ আগস্ট ‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই সভায় তৃণমূল থেকে আসা প্রায় ৫৩ জন নেতা নানা চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন। সভা শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কোন্দল চরমে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঢাকায় তলব করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানা যায়।
তার আগে সংগঠনিকভাবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দলীয় প্যাডে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। ওই সভায় নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। আমি প্রতি ছয় মাস পর পর জরিপ করি। সেই জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে।”
এদিকে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, “ইস্যু পেলেই বিএনপি তা ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করে, তাই তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশবিরোধী চক্র-অপশক্তিরা রাজনৈতিক হানাহানি সৃষ্টি করতে তৎপর রয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সহ সকল সংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যে ষড়যন্ত্র করছে। এখনো তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়। তারা বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে ধ্বংস করতে চায়। এরা চায় বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যাক। আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম একই প্রসঙ্গে বলেন, “শোকের মাসেও বিএনপি কর্মসূচির নামে নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে।” তিনি বলেন, “অবরোধের নামে অগ্নি সন্ত্রাস, জ্বালাওপোড়াও, রাস্তায় জনগণের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে বিএনপি।” আগস্ট এলে এরা হত্যা, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। আগস্ট এলেই তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। তারা হিংস্র হয়ে ওঠে, তার জন্য আমরা সজাগ থাকি।”
একইসুরে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই আজ ষড়যন্ত্র করছে। ’৭৫ এর খুনি তারা, ২০০৪ সালের খুনি তারা, সবই একই সূত্রে গাঁথা। হয়তো ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে, সেই শক্তির প্রতিনিধিত্ব কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়ার জায়গায় জিয়াউর রহমান, জিয়ার ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়ার ধারাবাহিকতায় এসেছেন তারেক জিয়া। শক্তি তো একই শক্তি। আমাদের কাজ বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচিত করা। বিএনপির মূল শক্তির ডালপালারা এখন ষড়যন্ত্র করছে।”