দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মিটিয়ে দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বার্তা দেওয়া হবে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায়। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এ বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
কেন্দ্র থেকে উপজেলা ও পৌরসভা পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে দলীয় পদধারী স্বতন্ত্র এমপিরাও রয়েছেন। সব মিলিয়ে সারা দেশের সাড়ে চার হাজার নেতার এই বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নেওয়ার কথা।
নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সবাইকে গণভবনে ডেকেছেন। বিরোধ মিটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, তৃণমূলের নেতারা যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার মধ্যে না জড়ায় এমন বার্তা দেওয়ার জন্যই দলের সর্বস্তরের নেতাদের ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করেছেন নেত্রী।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্র জানায়, বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপি, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে দলের আগ্রহী প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হয়। এই কৌশলের ফলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য পূরণ হলেও দলের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন মূল্যায়ন থেকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিগত জরুরি সভায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার পক্ষে মত দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দলের মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের জন্য বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজকের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২২৩ আসনে জয়ী হন নৌকার প্রার্থীরা। অন্যদিকে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হন ৬২ জন। এর ৫৮ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। যাদের বেশির ভাগ আবার দলীয় নৌকার প্রার্থীদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও তার রেশ কাটেনি। এক মাস পরও গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা, সিটি ও পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে দলের মধ্যে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি না হয়, এজন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কঠোর অবস্থানের কথা জানাবেন সংশ্লিষ্ট সবাইকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রভাব যেন দলীয় রাজনীতি ও আসন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে না পড়ে এজন্য ঐক্যের বার্তা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, আগামী মে মাসে চার ধাপে দেশের ৪৯২ উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৪৮৫টিতে নির্বাচন হবে। তার আগেই আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বেশ কিছু পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগের আজকের বিশেষ বর্ধিত সভা প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলের সুদৃঢ় ঐক্যের দরকার। গত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কৌশলগত কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। যে নির্বাচনে ৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তারাও কিন্তু আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি, মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। এসব বিষয়ের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলে সুদৃঢ় ঐক্য দরকার। সবার মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আবহ তৈরির জন্য এই বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন।