ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা গোপনে দেশ ছেড়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও ব্রিটেনে আশ্রয় নিয়েছেন।
যদিও আওয়ামী লীগের দেশত্যাগ করা নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমানে অবস্থান করছেন ভারতে। বাকিদের বেশিরভাগ আশ্রয় নিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ব্রিটেনে বহু নেতা আশ্রয় নিলেও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া নেতাদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলাট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অন্তত তিন নেতার ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রনজিত চন্দ্র সরকার, বিধান কুমার সাহা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক সুয়েব আহমদ।
অবশ্য ইতোমধ্যে একজন নেতার অ্যাসাইলাম আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানকে ব্রিটেনে আনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তিনি। তাছাড়া যুক্তরাজ্যে আসা নেতাদের অনেকে লন্ডনে দলীয় অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। তারা অন্যান্য নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অনেকে আবার নীরবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। কৌশলে অন্য নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন।
অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করা নেতা রনজিত চন্দ্র সরকার ২০২৪ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। অ্যাসাইলাম চাওয়া আরেক নেতা বিধান চন্দ্র সাহা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রনজিত ও বিধান দুজনেই সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানও। তার ছেলে ব্রিটেনে পড়াশোনা করেছেন। যার দেখভাল করছেন সিলেটের সাবেক এমপি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী।
শুধু তাই নয়, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার, সিলেট সিটির সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদেরও অবস্থান এখন যুক্তরাজ্যে। কবির বিন আনোয়ারের মেয়ে লন্ডনে অধ্যয়নরত। আর আজাদের স্ত্রী নাজমা রহমান লন্ডনের ক্যামডেন কাউন্সিলের সাবেক মেয়র।
এদিকে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মেয়ে আগে থেকেই লন্ডনে পড়াশোনা করতেন। যে কারণে খালিদ মাহমুদ ও তার স্ত্রীর আসা-যাওয়া ছিল যুক্তরাজ্যে। এখন তাদের অবস্থান লন্ডনে। যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পদের মালিক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীও এখন অবস্থান করছেন লন্ডনে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতসহ বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের বহু নেতা। সে তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
টুকুর বড় ছেলে বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন বেশ কিছু সম্পত্তি কিনেছেন ব্রিটেনে। তারা সবাই এখন ব্রিটেনে বসবাস করছেন। তাছাড়া ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব ও আজাদুর রহমান।
ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার বাংলাদেশি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এসব বাংলাদেশি ব্রিটেনে এসেছেন ছাত্র, কর্মী কিংবা ভ্রমণ ভিসা নিয়ে।