রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ (১০ ডিসেম্বর)। এই সমাবেশকে ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন শেষ হওয়ার পর দিন থেকেই মাঠে নামেন সরকারি দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজধানীজুড়ে তাদের সতর্ক পাহারা বসানো হয়েছিল। গণসমাবেশে সারাদেশ থেকে বিএনপি সমর্থকদের আসা ঠেকাতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান নিয়েছিলেন সরকার দলীয় সমর্থকরা। শুক্রবার সেই অবস্থান অব্যাহত ছিল। সব মিলিয়ে গণসমাবেশকে ঘিরে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আওয়ামী লীগও প্রস্তুত। শনিবারও ভোর থেকেই মাঠে রয়েছেন তারা।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোনো রকম ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। শুক্রবার মহানগর নাট্যমঞ্চে দলীয় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা এমনটাই বলেছেন। শনিবার আওয়ামী লীগের বড় জমায়েত থাকবে ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে। সেখানে দুপুরে সাভার ও ধামরাই উপজেলা এবং সাভার পৌরসভা ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা যোগ দেবেন। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দক্ষিণের ২৪টি থানার ৭৫টি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা বসিয়েছেন। এই ৭৫টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সতর্ক পাহারা চলছে। সংশ্লিষ্ট থানার মূল পয়েন্ট কিংবা মোড়ে থানা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি তদারকি করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সে জন্য দলীয় নেতাকর্মীকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরাও সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছি। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় রয়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ২৬টি থানার ৫৪টি ওয়ার্ডে অনুরূপ অবস্থান নিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, শনিবার সকাল থেকে মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকদের অবস্থান রয়েছে। কোথাও কোথাও লাঠিসোটা হাতেও দেখা গেছে নেতাকর্মীকে। লগি-বৈঠা হাতে মিছিল ও স্লোগান দিয়েছেন সরকার সমর্থকরা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীর ভিড় আরও বেড়েছে।
নয়াপল্টন থেকে মতিঝিল এলাকার মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও অবস্থান নিয়েছেন। মিছিল দেখা গেছে শাহজাহানপুর, ধানমন্ডি রাসেল স্কয়ার, কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, কলাবাগান, ভূতের গলি, হাতিরপুলসহ অন্য এলাকায়ও। কল্যাণপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতাকর্মীকে পিকআপে চড়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
এদিকে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আটটি প্রবেশ পয়েন্টে পাহারা বসিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ঢাকা মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড নেতাকর্মী এবং সরকার সমর্থক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এ পয়েন্টগুলো হচ্ছে সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ী, উত্তরা-আজমপুর-আবদুল্লাহপুর-বিমানবন্দর, সদরঘাট-সোয়ারীঘাট-বাবুপুরা ব্রিজ, গুলিস্তান, গাবতলী-আমিনবাজার, আশুলিয়া, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং মহাখালী।
এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুসংলগ্ন কদমতলী এলাকায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে ‘আসুন বিজয় উল্লাসে মাতি’ ব্যানারে অনুষ্ঠান চলছে বৃহস্পতিবার থেকেই। এটি চলবে শনিবার বিএনপির গণসমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। সেখানে বিশাল শামিয়ানা টানিয়ে মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের পার্শ্ববর্তী থানা ডেমরায় আওয়ামী লীগের ১৩টি স্পটে সর্তক অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এসব স্পটগুলো হচ্ছে সুলতানা কামাল ব্রিজ, স্টাফ কোয়ার্টার, চনপাড়া ব্রিজ, ডেমরা বাজার, সাইনবোর্ড থেকে ডগাইরগামী রোড, ডেমরা চৌরাস্তা, মিরপাড়া পেট্রোল পাম্প, এভিনিউ-১ (দ্য ওয়ান রেস্টুরেন্টের সামনে, গলাকাটা ব্রিজ, আল আমিন রোডের মাথা, ফার্মের মোড়, কোনাপাড়া ব্রিজ, ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের দক্ষিণ প্রধান সড়ক সংলগ্ন ও রানীমহল ব্রিজের ডাল। এই ১৩ টি স্পটে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃত্বে অবস্থান নেবেন ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতারা।
একইভাবে সমাবেশের পার্শ্ববর্তী ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ৬টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর দখলে চলে যায় ধলপুর, যাত্রাবাড়ীর আউটফল, সিটিপল্লী, সায়দাবাদ, জনপদ মোড়, মানিকনগর, গোপীবাগ রেলগেইটসহ আশপাশের এলাকাও। এতে ওই এলাকার নিজেদের কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ৪৮ ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলো। সকাল থেকে দেখা যায়নি এই এলাকার নেতাকর্মীদের।
এছাড়া ঢাবি ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে শনিবার সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা থেকে পুলিশের প্রতিবন্ধকতা উঠিয়ে নেওয়ার পর সেখানে মিছিল করেছে ছাত্রলীগ।