প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সোনার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভ্যাট হার কমিয়ে ৩ শতাংশ করাসহ ১৫টি দাবি চূড়ান্তকরণের জন্য পুনরায় দাবি তুলেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সংগঠনটির অভিযোগ, প্রাক-বাজেটে এসব দাবি উত্থাপন করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসব দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
রোববার (৯ জুন) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে সংগঠনটির আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫ সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে আমরা (বাজুস) ১৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। যা ছিল আমাদের জুয়েলার্স মালিকদের আশার প্রতিফলন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তার একটি দাবিও পূরণ হয়নি। ফলে জুয়েলারি শিল্পকে হুমকির মুখে পড়েছে। বাজুস আবারও প্রস্তাব করছে সোনার অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরোপিত যে ৫ শতাংশ ভ্যাটের কথা বলা হয়েছে, তার হার কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। এতে ক্রেতা সাধারণ ভ্যাট প্রদানে উৎসাহিত হবেন। পাশাপাশি দেশের জুয়েলারি খাত থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, জুয়েলারিশিল্প সম্পর্কিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-(২০১৮) সংশোধিত-২০২১’ সংশোধনের ৩ বছর অতিবাহিত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অসম শুল্ক ও কর কাঠামো, প্রাথমিক কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিতে কালক্ষেপণ (সময় নষ্ট করা) ও অতিরিক্ত শুল্ক ব্যয়, সঠিক নীতিমালার অভাবে এই খাত দেশীয় অর্থনীতি থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
বাজুস মনে করে, সোনা চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। এ ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুল সংশোধন করার মাধ্যমে, সোনার বার ও রূপার বার আনা বন্ধ করতে হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে অবাধে সোনার বার বা পিণ্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। এতে চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্তকরণ সময় আমাদের (বাজুস) প্রস্তাব সমূহ পুনরায় বিবেচনার দাবি করছি। চূড়ান্ত বাজেটে এসব দাবির প্রতিফলন না হলে, জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া গতি থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, “এই দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবে বাজুস। যে আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা হবে আমলা জটিলতার বিরুদ্ধে।”
বাজুসের ভ্যাট কমানো দাবি ছাড়াও বাকি ১৪টি দাবির মধ্যে রয়েছে, ইএফডি মেশিন যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করা সকল জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা। অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিকের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র জুয়েলারি খাতের জন্যে রেয়াতি হারে ১ (এক) শতাংশ নির্ধারণ করা।
আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা। হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা। ল্যাব গ্রাউন্ড ডায়মনের এইচএস কোড (৭১০৪.২১.১০) অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা।
বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃণ হীরা ৪০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা। আয়কর আইন ৪৬-(বিবি)(২) ধারার অধীনে গোল্ড রিফাইনারি বা সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদান।
সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান করা। আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’এর আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদান করা।
‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর ৮ দশমিক ২ উপধারার অনুসারে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা। বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু অ্যাডিশনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা প্রদান।
এইচএস কোডভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার সমূহ হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা ও মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের উদ্ধার করা সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদান করার প্রস্তাব করছি।