এবার বাংলাদেশ পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে রেশনসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চাল ও গমের বিক্রয়মূল্য কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এখন থেকে রেশনের চাল ও গমের দাম হবে এই দুটি পণ্যের অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ। এতে প্রতি কেজি রেশনের চালের দাম হবে পড়বে ১১ টাকা এবং আটার কেজি হবে ১২ টাকা।
বর্তমানে প্রতি কেজি রেশনের চাল ও গমের মূল্য প্রতিষ্ঠানভেদে ১.০৯ টাকা থেকে ১.৮০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ দুটি পণ্যের দাম ৮০০ শতাংশ বাড়ছে।
অর্থ বিভাগের বাজেট উপসচিব নূরউদ্দিন আল ফারুক স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, চাল ও গমের বিক্রয়মূল্য হবে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের চাল ও গমের নির্ধারিত অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ। অর্থ বিভাগ হতে প্রতি অর্থবছরের শুরুতে চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে।
এর আগে, ১৯৯১ সালে সরকার সর্বশেষ রেশন পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছিল।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার কাছে আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে, তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি। তবে প্রতি টন চাল ও গমের মূল্য ৫০ হাজার টাকার বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তারা। এ হিসাবে রেশনের চাল ও গমের প্রতি কেজির দাম হবে ১০ টাকা।
চলতি অর্থবছরে প্রতি টন চালের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১৮৯৪.৫৮৯ টাকা এবং প্রতি টন গমের অর্থনৈতিক মূল্য ৪৭৩০২.১৪০ টাকা।
রেশনে বিতরণ করা চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিনের দাম বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে সরকারের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সংস্থাভেদে চার সদস্যের একটি পরিবার প্রতি মাসে ১.০৯ টাকা থেকে ১.৮০ টাকা দরে ৩৫ কেজি চাল ও ৩০ কেজি করে আটা পেয়ে থাকে। এ ছাড়া, প্রায় ৩ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চিনি, ১.২০ টাকা দরে ৮ কেজি মসুর ডাল এবং ২.৩০ টাকা দরে ৮ লিটার সয়াবিন তেল পায়। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা বর্তমানে ১.২০ টাকা কেজি দরে চাল ও আটা পাচ্ছেন।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাভেদে রেশনের চাল ও গম বা আটার মূল্যে সামান্য হেরফের রয়েছে, তবে প্রতি কেজি চাল ও গমের দাম ২ টাকার বেশি নয়। রেশন সুবিধার আওতায় পরিবারের আকারভেদে একেকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী একেক দামে রেশন সুবিধা পাচ্ছেন। বিভিন্ন সংস্থার জনবল অবসরে যাওয়ার পরও আজীবন রেশন সুবিধা ভোগ করছেন।
সরকার দেশের ভেতর থেকে বাজারমূল্যে কিনে কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করে এসব পণ্য রেশন হিসেবে বিতরণ করে। এখাতে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করতে হচ্ছে। চাল ও গমের দাম কিছুটা বাড়ানোর কারণে ভর্তুকির পরিমাণ কমবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৭,৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।