সেনাপ্রধানকে নিয়ে হাসনাতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা জানাল সেনাসদর

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেনাবাহিনী সদরদপ্তর।

শনিবার (২২ মার্চ) নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের এক বিবৃতিতে সেনানিবাসে খোদ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে ১১ মার্চ বৈঠকটি হওয়ার কথা স্বীকার করা হলেও হাসনাত আব্দুল্লাহকে ‘ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগে’র অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও এনসিপির আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

শুক্রবার (২১ মার্চ) হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, ১১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে এক বৈঠকে আসন সমঝোতা ও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি লেখেন, “কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের।”

হাসনাত বলেন, “ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১১ মার্চ বেলা আড়াইটায় এক বৈঠকে তাদের এই রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে সমঝোতা ও সংসদের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেওয়া হয়।”

হাসনাত আবদুল্লাহর এই পোস্টের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ করলে সেনাসদর একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় উল্লেখ করা হয় নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে।

নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করেছে যে ওই বৈঠকটি সেনাপ্রধানের সঙ্গেই হয়েছিল; তবে ছাত্রনেতাদের বৈঠকটি আগ্রহেই হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বই অন্য কিছু নয়’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনাসদরের বিবৃতিতে। এ ছাড়া এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।

বিবৃতিতে বলা হয়, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি অ্যাডভাইজার তাদের সেনাসদরে আসার জন্য বলেন। অতঃপর ১১ মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তা নেত্র নিউজ স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পৃথকভাবে নেত্র নিউজকে বলেছেন, ছাত্রনেতাদের আগ্রহ ও উদ্যোগেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল।

নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি সেনাসদরের বক্তব্যে অস্বীকার করা হয়নি। সেখানে বলা হয়, আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ উঠে এলে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিজের অভিমতের কথা ছাত্রনেতাদের জানান।

বিবৃতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত নয় ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের সমন্বয়ে নতুন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ফলপ্রসূ ও আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল মিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্য সেনাপ্রধানের নিজস্ব অভিমত হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছাত্রনেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি কোনোক্রমেই তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদের প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ করার ঘটনা নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর

হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, আলোচনার একপর্যায়ে বলি, যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দেবেন। অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না।’

নেত্র নিউজ লিখেছে, সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাপ্রধান ‘অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের’ মতো দেখতেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি

সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ

হাসনাতের বক্তব্যে দ্বিমত জানিয়ে যা বললেন সারজিস

বিস্তারিত পড়ুন

সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার ১০ দিন পর ফেসবুকে হাসনাত আব্দুল্লাহর এই ধরনের অনভিপ্রেতকর পোস্ট দেওয়া সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বই অন্য কিছু নয় বলেও বিবৃতি জানানো হয়।