নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয় বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) কক্সবাজার সফরের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক টক শোতে ২০২৫ সালে নির্বাচন হবে বলে আইন উপদেষ্টার করা মন্তব্য নাকচ দেন ধর্ম উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের মন্তব্যও সরকারের সিদ্ধান্ত নয় বলে জানান তিনি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গ। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র নড়বড়েই থেকে যাবে। তাই সরকার সংস্কারে গভীরভাবে কাজ করছে।”
উপদেষ্টাদের ক্ষমতাপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, “অনেক নেতা প্রকাশ্যে বলছেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবেন না। এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের কোনো ধরনের ক্ষমতাপ্রীতি বা লোভ নেই। আমরা এসেছি অস্থায়ীভাবে; দেশ সংস্কারের জন্য আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ হলে কাউকে বলতে হবে না। নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা চলে যাব।”
এদিকে, কক্সবাজারের বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) এর ইছালে ছওয়াব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
এ সময় ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, দেশের পলিটিক্যাল কালচার নষ্ট হয়ে গেছে, এটা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তারা শাসন করতে আসেননি। আগামী দিনে যারা দেশ চালাবেন, তাদের পথ মসৃণ করতে এসেছেন। নির্বাচনের সংস্কৃতি বহুদিন যাবৎ এদেশের মানুষ ভুলে গেছে। ভোট কাকে বলে মানুষ তা জানে না। ভোট কেন্দ্রে মানুষ যেতো না।
তিনি আরও বলেন, “ভোট হলো আমানত। ভোটের মাধ্যমে একজন ভালো মানুষ নির্বাচিত হবে। আপনার ভোট আগামী দিনে আপনিই দেবেন, পছন্দের প্রার্থীকে দেবেন। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা বিদায় নেব।”
উপদেষ্টা আরও বলেন, “বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। আরেকটি সরকার না আসা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এই সরকারের অগ্রাধিকার হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, টেকসই অর্থনীতি অর্জন, আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও কিছুক্ষেত্রে সংস্কার করা। ইতোমধ্যে কিছু সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা কাজ করে যাচ্ছে।”
বায়তুশ শরফের অবদান তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, “বায়তুশ শরফ একটা ইতিহাস। দেশব্যাপী এই সংগঠনের শত শত মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এ সংগঠনের জনসম্পৃক্ততা এককথায় অসাধারণ। বিদেশি কোন সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা অনুদান নেই, শুধু স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিয়ে এতো বড় কর্মযজ্ঞ আমাদেরকে অবাক করে দেয়।”
বায়তুশ শরফের পীর আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিনের সফরে বর্তমানে কক্সবাজারে রয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন। শনিবার চকরিয়া-পেকুয়ায় একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার।