সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি, আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু চেয়ার, একটি ম্যুরাল স্থাপনের দাবিতে জানিয়েছে রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থী সমাবেশ করেছে ‘চাকরি প্রত্যাশীরা’।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কেন্দ্রীয় কার্য নিবাহী সংসদের ব্যানারে ওই শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি সংগঠনটির আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাসেলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনে (বিসিএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস) আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর, সরকারি নার্সিংয়ে ৩৫ বছর এবং বেসরকারি স্কুল-কলেজে ৩৫ বছর। দুঃখজনক হলেও সত্যি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংস্থাগুলো তাদের চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা সরকারি মানদণ্ড অনুযায়ী ৩০ বছরকেই অনুসরণ করে। বাংলাদেশের জাতীয় যুব নীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের যুবক বলা হলেও ৩০ বছর হলেই তাদের চাকরিতে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।”
অনেক বক্তা ক্ষোভ করে বলেন, “আমাদের সার্টিফিকেট আজ ঝালমুড়ি খাওয়ার কাগজে পরিণত হয়েছে। ৩০ বছর পর এ সার্টিফিকেটের আর কোনো মূল্য নেই। বয়সের ছক বেঁধে উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করতে এ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।”
তারা বলেন, “বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর, কোনো কোনো দেশে তা উন্মুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশেগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্য ভেদে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫-৪৫ বছর, মালদ্বীপে ৪৫ বছর, শ্রীলঙ্কায় ৩৫ বছর, নেপালে ৩৫ বছর, আফগানিস্তানে ৩৫ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর।”
নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এর পাতা ৩২ এবং শিক্ষা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদ টেনে এনে বক্তারা বলেন, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি হতে অবসরের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং চাকরি শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়া ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর এবং অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হোক।”
চাকরিতে আবেদনের ফি কমানোর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, “চাকরির আবেদন ফি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে (প্রথম শ্রেণিতে ২০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০০ টাকা, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫০ টাকা) প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকির উদ্যোগ নিতে হবে। একই তারিখে একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।”
এছাড়াও তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, আইন অনুষদের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যূরাল নির্মাণসহ দাবির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে স্থান নির্ধারণের জন্য আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ “বঙ্গবন্ধু ল’ কমপ্লেক্স” এর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেন।