সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে গত ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার জন্য নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানির জন্য সোমবার (২৮ অক্টোবর) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২৭ অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালতে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এএসএম শাহরিয়ার কবির। সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়েও পৃথক রিট করেন তিনি।
পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে করা রিটে এই সংশোধনী আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা প্রশ্নে রুল চাওয়া হয়েছে। এই রিটে বিগত তিনটি নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত) আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা প্রশ্নেও রুল চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ ছাড়া ২০১৮ সালের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের দুটি ধারার (মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা-সম্পর্কিত) বৈধতা নিয়েও আরেকটি রিট করেন মোফাজ্জল হোসেন।
এই পৃথক চারটি রিট বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চের রোববারের (২৭ অক্টোবর) কার্যতালিকায় ওঠে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির বলেন, আদালত বলেছেন, “চারটি রিট সোমবারের কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।”
‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আইন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। বিপ্লবী সরকারের ঘোষণা এখন পর্যন্ত গেজেট আকারে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সম্মানিত করার ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে এতে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৫৭ ও ৫৮ অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের পদের মেয়াদ উল্লেখ রয়েছে। এই দুটি অনুচ্ছেদ অনুসারে পরবর্তী উত্তরাধিকারীর কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা নিজ নিজ পদে বহাল থাকবে। এ অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন না হলে সংবিধানের ১২৩ (৩) (খ) অনুচ্ছেদ ভঙ্গ হবে। আর এই লঙ্ঘনের জন্য বর্তমান সংবিধানের ৭ (ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধসহ প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব যুক্তি তুলে ধরে বর্তমান সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ হিসেবে ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে।”
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, বিপ্লবের তরঙ্গ বিচার বিভাগ, প্রেস, প্রশাসন এবং একটি ঐক্যমতে গঠিত সরকারসহ জীবনের সব স্তরকে প্রভাবিত করেছে, যা একটি বিপ্লবী সরকার হিসেবে সংবিধানের আওতার বাইরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কোনো ঘোষণা প্রকাশ করেনি। মাটির সন্তানকে ২০২৪ সালের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়নি।