রাজধানী ঢাকার গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য কোনোভাবেই থামছে না। পরিবহন চালক ও কন্ডাক্টররা কোনো নিয়মকেই আমলে নিচ্ছে না। তাদের নৈরাজ্য আর দুর্ব্যবহার বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ নিয়ে বিআরটিএর কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেই।
ভাড়া নৈরাজ্য কমাতে গণ পরিবহনে ই-টিকেটিং চালু করলেও তা মানছে না পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ‘ই-টিকেটের মেশিনে ভাড়া কাটতে সময় বেশি লাগে’ এই অজুহাতে সে কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছে তারা।
সরজমিনে রাজধানীর প্রধান কয়েকটি রুটে দেখা যায়, কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলি রুটে যেসব বাস চলে তার কোনোটিতেই পজ মেশিন ব্যবহার হয় না। আগের নিয়মেই ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে বাস কন্ডাক্টরদের। সেই পুরোনো স্বেচ্ছাচারিতা এখনো চলছে যাত্রীদের ওপর। প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও তা নেই। চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকার নিয়মও কেউ মানেন না। যাত্রী পেলে যেখানে সেখানে থেমে যায় বাস। যাত্রী নামানো হয় যত্রতত্র।
সাব্বির আহমেদ নামের লাব্বাইক পরিবহনের এক যাত্রী ই-টিকেট নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আগে ১৬ টাকার ভাড়া ২০ টাকা, ৩৫ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিতে হতো। ই-টিকিট চালু হওয়ার পর ভাড়া নিয়ে বাস সহকারীর সঙ্গে যাত্রীদের ঝামেলা একটু কম হতো। কিন্তু টিকেট সিস্টেম বন্ধ করে দিয়ে তারা আগের নিয়মেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।”
মিরপুর থেকে মতিঝিল নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন শিহাব উদ্দিন। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কিলোমিটার হিসাবে ফার্মগেট থেকে মিরপুর কাজীপাড়ার ভাড়া হয় ৯ টাকা। সেক্ষেত্রে যাত্রীরা ১০ টাকা দিলেও বাস সহকারী তা মানে না। তার এক কথা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া যেখানেই নামেন ভাড়া ১৫ টাকাই।”
আনোয়ার নামে আরেক যাত্রী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এমন একটা দেশে বাস করছি, যেখানে বাসে উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। সিটিং কোনো বাস নেই। সব বাসেই ৩৮/৪০ জন যাত্রী উঠানোর কথা থাকলেও দাঁড়িয়ে, বা ঝুলে থেকে বাস কানায় কানায় পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত যাত্রী উঠানো হয়।”
আয়াত পরিবহনের বাস সহকারী জুয়েল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সকাল ও বিকেলে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে মেশিনে টিকেট কাটা সম্ভব হয় না। তখন হাতে ভাড়া আদায় ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তাছাড়া খুচরা ভাড়ায় সাধারণত টিকেট কাটা হচ্ছে না। যখন যাত্রীর চাপ কম থাকে তখন টিকেট কেটে ভাড়া তোলা হয় ”
যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “শহরে সাধারণ মানুষের চাহিদার তুলনায় গণপরিবহণের সংখ্যা এমনিতেই অনেক কম। তাই মানুষকে জিম্মি করে নিয়মিত আদায় করা হতো অতিরিক্ত ভাড়া। এমন নৈরাজ্য বন্ধে গণপরিবহনে ই-টিকেটের সিস্টেম চালু করা হয়। সেটাও এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে সাধারণ যাত্রীরা কখনো তাদের প্রত্যাশিত সেবা পাবে না ।”
ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা সব বাসে ই-টিকেটের মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা চালু করতে পারিনি। যেগুলো করেছি সেগুলোতে ঠিকমত ব্যবহার হচ্ছে না, এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও আসছে। মেশিন চার্জ কিভাবে দীর্ঘক্ষণ রাখা যায়, এবং বাস সহকারীরা যাতে নিয়মত পজ মেশিন ব্যবহার করে এই বিষয়ে শিগ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”