রাজধানী ঢাকার নামিদামি ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে বাসা ভাড়ায় যেন নৈরাজ্য চলছে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও কোচিংয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাড়ির মালিকেরা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অংকের টাকা। প্রতিবছর ভর্তি এবং কোচিংয়ের এই সময়ে তারা নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করে নেন অসহায় ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকলেও তারা বাড়িভাড়া আইন এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির অজুহাতে নির্বিকার রয়েছেন। যে কারণে প্রতিবছর ভুগতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এমন এক ভুক্তভোগী যুবকের সঙ্গে। তাঁর নাম মো. জুবায়ের। তিনি পূর্ব রাজাবাজার এলাকার একটি বাসায় সিট ভাড়া নিয়ে থাকেন। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭ টায় বেড়িয়ে ১১টা পর্যন্ত বাসা খুঁজে ক্লান্ত তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে জুবায়ের বলেন, “সিন্ডিকেট ছাড়া কিছু নয়, অক্টোবর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে আসবে। আর বাসাভাড়া নেওয়ার জন্য আমাদের পথে পথে ঘুরতে হবে। প্রতিবছর এ সময়টাতে বাড়ির মালিকেরা বাসাভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে যুক্ত করে সার্ভিস চার্জের বাড়তি টাকা। উপায় না পেয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের।”
তিনি ফার্মগেট, কাঁঠাল বাগান, কলাবাগান, তেজকুনীপাড়া এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে বাসা খুঁজে চলেছেন। পছন্দের বাসা না পাওয়ায় এখন হতাশ তিনি। জুবায়েরের মতো অবস্থা নিবিড় পাল আর তুহিন ইসলামেরও, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এদিন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে পান্থপথ মোড়সহ আশপাশের এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে বাসা ভাড়ার পোস্টার। যাতে লেখা রয়েছে, “কোচিং করার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সিট বুকিং চলছে, ভিআইপি বাসায় থাকা খাওয়ার সুবিধা, মানসম্পন্ন খাবার আর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা- আমরাই দিচ্ছি।” তবে এসব পোস্টারে সব সুযোগ-সুবিধার কথা আর মোবাইল নম্বর থাকলেও, নেই বাসা ভাড়ার পরিমাণ।
এ বিষয়ে এলাকার স্থানীয় এক চা দোকানি সিয়ামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের এ সময়টাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় আসেন। তারা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শহরে থাকেন। এই সুযোগকে পুঁজি করে বিভিন্ন বাসা ও হোস্টেল মালিকরা বাসাভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেন। এ কারণে বিপাকে পড়েন জুবায়েরের মতো অনেক শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের বাসাভাড়া সংক্রান্ত আইন থাকলেও তা কার্যকর নেই।
ভুক্তভোগী দিপক পাল বলেন, “বাসাভাড়া তো বাড়িয়েছে, সেইসঙ্গে সার্ভিস চার্জও যুক্ত করছে। তাই অনলাইনে বাসা খুঁজছি। রাস্তায় তো শুধু কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাসা ভাড়ার পোস্টার রয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি এই ঝামেলা মাথায় চেপে পড়ছে।”
পোস্টারের একটি মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলে কথা হয় শান্ত নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চাকরিজীবীরা থাকতে চায় না। তাই এ সময়টাতে শিক্ষার্থীরাই থাকে। আর বছরের অন্যান্য সময়ে কলেজ শিক্ষার্থীরাও থাকে। তখন তাদের ভাড়া ২ হাজার থেকে ২৫’শ হয়। আর এ সময় কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যার কাছে যেমন নেওয়া যায়। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে ৭ হাজার থেকে শুরু হয়।”
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “সিন্ডিকেট বলেন আর সুযোগ সন্ধানী ব্যবসা, যেটাই বলেন- এই ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে। এটি মূলত সিটি করপোরেশন দেখে। তবে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসক কারও নজরদারি নেই এই আইনে। তাছাড়া ভাড়ার ব্যাপারে একটি কর্তৃপক্ষ বা কমিশন গঠন করার কথা ছিল। এসব বিষয়ে আইন নিয়ে, সেইসঙ্গে নজরদারি এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে আমি মনে করি।”
এই বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, “এটি আমার সাবজেক্টের মধ্যে পড়ে না। এটা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিষয়।” এসময় তিনি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ করেন, এমন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।