চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়েছে ব্যারিস্টার সুমনের গাড়িসহ আমদানি করা ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্যরা। কিন্তু গাড়ি বন্দরে আসার আগেই সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় এখন আর গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করানো যাবে না। ফলে গাড়িগুলো কোটি টাকার মধ্যে আমদানি হলেও এখন এসব ছাড়াতে অন্তত ৬ কোটি টাকা করে শুল্ক দিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বন্দরের কার শেডে গিয়ে দেখা গেছে, শেডের একটি লাইনে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে বিলাসবহুল গাড়িগুলো।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, সংসদ সদস্য না থাকায় তারা এখন আর শুল্কমুক্ত গাড়ি ছাড়ের সুবিধা পাবেন না। এসব গাড়ি ছাড় নিতে হলে নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ৪ হাজার সিসির প্রতিটি ৮২৬ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েক দিন আগে কয়েকজন সংসদ সদস্য তাদের গাড়ি খালাস নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ কয়েকজন। তবে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ অনেক এমপি-মন্ত্রী তাদের গাড়ি খালাস করতে পারেননি।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গাড়িগুলোর বেশির ভাগ গাড়ি জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট মডেলের গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৪ হাজার সিসি।
সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে সংসদ সদস্যদের তা দিতে হয় না।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িগুলো আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, নেত্রকোনার সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য এস এ কে একরামুজ্জামান, ফয়জুর রহমান, সিরাজগঞ্জের চয়ন ইসলাম, জান্নাত আরা হেনরি, নাটোরের আবুল কালাম, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বগুড়ার মজিবুর রহমান মঞ্জু, রেজাউল করিম তানসেন, টাঙ্গাইলের অনুপম শাহজাহান জয়, হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সুনামগঞ্জের রনজিৎ সরকার, ড. সাদিক, গাইবান্ধার আবুল কালাম আজাদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (যিনি নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন), যশোরের নওয়াব আলী জোয়ার্দার, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, লক্ষ্মীপুরের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও দিনাজপুরের মুহাম্মদ জাকারিয়া।
এ ছাড়া গাড়ি আমদানি করেছেন সাবেক এমপি আব্দুল মোতালেব, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, শাহ সরওয়ার কবির, এবিএম আনিসুজ্জামান, সাদ্দাম হোসাইন পাভেল, এসএম আল মামুন, আক্তারুজ্জামান, মো. সাইফুল ইসলাম, এসএম কামাল হোসেন, মাহমুদ হাসান রিপন, মুজিবুর রহমান, এসএম আতাউল হক, মাহমুদুল হক সায়েম, মো. মতিউর রহমান, মো. তৌহিদুজ্জামান, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ ও সিদ্দিকুল আলম।
এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্যদের মধ্যে গাড়ি আমদানি করেছেন তারানা হালিম, সানজিদা খানম, নাসিমা জামান ববি, খালেদা বাহার বিউটি, রুনু রেজা ও সাহিদা তারেক দিপ্তি।
গাড়ি আমদানিকারক সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িগুলো আনা হলেও সংসদ বহাল না থাকায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি ছাড়ছে না কাস্টমস। গাড়িগুলো চার হাজার সিসির। এগুলোতে শুল্ক দিতে হবে ৮২৬ শতাংশ। এসব গাড়ি কোটি টাকার মধ্যে কেনা পড়লেও এখন শুল্ক দিতে হবে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে ইতোমধ্যে ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি এসেছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে গাড়িগুলো আমদানি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে, তা খালাসের সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী- স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই গাড়িগুলো নিতে হবে।