স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না করলে স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত করে চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহায়কদের গুণগত মান উন্নয়ন করে স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব। এমন অবস্থায় আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ১০ শতাংশ বরাদ্দ দরকার। এমনটা বললেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
স্বাস্থ্যখাতে অন্যান্য দেশের বরাদ্দের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক শারফুদ্দিন বললেন, দেশে গত দুই দশকে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। যা মালদ্বীপে ৯.১৪ শতাংশ, ভারতে ১.১ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে তা মাত্র ০.৪৭ শতাংশ।
তাঁর মতে, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে সরকার জিডিপি ২ শতাংশ বরাদ্দ রাখলে ভালো হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে মোট জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নিত করা। তিনি বলেন, অবশ্যই পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য। সরকারের কাছে এই “স্বাস্থ্য” যদি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হয়, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে অবশ্যই বাজেট বৃদ্ধি করা উচিত।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে যথাসাধ্য অবদান রাখা “দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ” এর প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবার শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারলেই এই খাতে পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০০ বিলিয়ন টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হলেও তা অপ্রতূল। কারণ মূল বাজেট ৮ লাখ কোটি টাকার ১০ শতাংশের থেকেও ৪০০ বিলিয়ন টাকা অনেক কম। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বাজেটে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নে ১০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এমতাবস্থায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ছিল এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট এর পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বলেন, দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইকুইপমেন্ট দেখাশোনার জন্য বায়ো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ। চিকিৎসা সেবা, মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আলাদা অতিরিক্ত বাজেট দেয়া প্রয়োজন। ব্যাসিক সাবজেক্টে শিক্ষক-স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে।
সাবেক উপাচার্য বলেন, “দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ” কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা ৭০টি দেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ৩০টি ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের এই স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহায়তা প্রদান করতে হবে। এছাড়া উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে। হেলথ কার্ড এবং স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে আরো উন্নত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অটোমেশনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট বাড়ানো এবং তার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা করে এবং বাজেট সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাভাবে ইমার্জেন্সি সেবা দেওয়া না গেলেও স্বায়ত্তশাসন দেয়া প্রয়োজন। সীমিত বাজেট থাকা সত্ত্বেও অপচয় ও দুর্নীতি রোধ করে দক্ষতা বাড়িয়ে বাজেটের অর্থ সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সামগ্রিক কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন মনে করেন, আরও বেশি শক্তিশালী এবং গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতকে সুদৃঢ়করণ করে বাংলাদেশেই যেন সকল রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সহজে যেন কেউ বিদেশে চিকিৎসা করার ব্যাপারে আগ্রহী না হয়, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য কেউ যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হয় তার জন্য বিশেষ স্কিম চালু করা প্রয়োজন। এই বাজেটেই এ সম্পর্কে নতুন নির্দেশনা এলে ভালো হয়।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য মনে করেন, সুস্থ জাতি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার মূল চালিকাশক্তি। সেজন্যই আসছে বাজেটে মূল বাজেটের ১০ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। যা চিকিৎসা সেবায়, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ও গবেষণা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রদান করা সম্ভব হবে। দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধির বিকল্প নাই।