বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি সবই আওয়ামী লীগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “ইতিহাসকে অস্বীকার করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা এক শ্রেণির মানুষের মজ্জাগত অভ্যাস। তারাই দেশের বিরুদ্ধে বদনাম ছড়ায়।”
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে বিকেল ৩টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে মুছে ফেলতে একটা শ্রেণি চেষ্টা করেছিল জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বের বুকে আমরা যে পরিচয়টা পেয়েছি, সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা যে মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছি, আমরা যে স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি সেটা তার হাত ধরেই এসেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকারসহ আমাদের সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে। ৪৭ সালে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়। সেখানে বলা হয় রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা এই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানান।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাঙালির স্বাধীনতা অস্তমিত হয়েছিল ২৩ জুন পলাশির আম্রকাননে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাস যদি দেখি, বাঙালির যা কিছু অর্জন, সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বিজয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ এই ভূখণ্ডে যা কিছু অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রও তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের নামও বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। জাতীয় সংগীত কি হবে- সেটাও বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছিলেন। জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজ, সেটাও বঙ্গবন্ধু ঠিক করে দিয়েছিলেন। কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ হবে, কোথায় প্রশিক্ষণ হবে সব ব্যবস্থাই বঙ্গবন্ধু করেছিলেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার পর ৯ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সংবিধান দিয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যপদ লাভও বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টাতেই হয়েছিল। জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, বাংলাদেশর স্থলসীমানা আইন, সমুদ্রসীমা আইন বঙ্গবন্ধুই করে গেছেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশ পুনর্গঠন করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি যে উদ্যোগ দিয়েছিলেন, তিনি থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এ দেশের মানুষ কিছু পেয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় থাকি আর বিরোধী দলে থাকি, জনগণের জন্য কাজ করি। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদের সামরিক সরকার এবং একনায়কের স্ত্রী যখন ক্ষমতায় ছিলেন, প্রত্যেকটি গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে। এর জন্য আওয়ামী লীগের ওপর বার বার আঘাত এসেছে। তারপরও বাংলাদেশের মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।”
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। আমরা বিদেশের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। যেহেতু খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিলেন, আর আমি দেশের গ্যাস বিদেশের কাছে বিক্রি করতে রাজি হইনি। তাই আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ দেশের মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসান। আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পৃথিবীর সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছি। মানুষ এখন স্বপ্ন দেখেন উন্নত জীবনের। দেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশকে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। আর এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই।”
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।