• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যেভাবে ‘আলাদীনের চেরাগ’ পেলেন আবেদ আলী


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৪, ০৬:৩৬ পিএম
যেভাবে ‘আলাদীনের চেরাগ’ পেলেন আবেদ আলী
কুলি থেকে কোটিপতি গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

পিএসসিসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ছেলেসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। তার বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রহমান মীর। পেশায় ছিলেন কৃষক। তার তিন ছেলে এক মেয়ে। তাদের মধ্যে আবেদ আলী মেঝ।

আবেদ আলীর বড় ভাই জবেদ আলীও একজন কৃষক। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর ছোট ভাইয়ের নাম সবেদ আলী। তিনি একজন অটোরিকশাচালক। এলাকায় রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তাতেই পরিবার চালান।

কৃষক বাবার যখন মৃত্যু হয় তখন আবেদ আলীর বয়স ৮ বছর। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেই বয়সেই জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় চলে যান। এরপর সেখানে কুলির কাজ শুরু করেন। পরে এক ব্যক্তির বুদ্ধিতে গাড়ি চালানো শেখেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। এরপর গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেন বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোতে।

১৯৯৭ সালের দিকে ঢাকার ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ব্যাচেলর মেসে থাকতেন আবেদ আলী। সেখানে পরিচয় হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শাহিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। শাহিনের মামা মেজবাহ চাকরি করতেন সচিবালয়ে। যার মাধ্যমে পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি হয় আবেদ আলীর।

বেসরকারি একটি টিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, গাড়িচালক হয়ে পিএসসিতে ঢোকার পরই আবেদ আলী প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। বছরের পর বছর ধরে বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে কামিয়ে নেন শতকোটি টাকা।

এসময় আলাদিনের চেরাগ হাতে পান আবেদ আলী। দামি বাড়ি, গাড়ি, প্লট-ফ্ল্যাট, এমনকি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স কোম্পানিরও মালিক হন। এখন নিজেকে পরিচয় দেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে। আর সেই টাকায় বিলাসী জীবনযাপনের পাশাপাশি গড়েছেন একের পর এক সম্পদ।

আবেদ আলীর উত্থান নিয়ে সম্প্রতি এক সমাবেশে তার ছেলে সিয়াম বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে তার ব্যবসা শুরু করেন।

নামাজ কামাই করেন না আবেদ আলী। তবে প্রশ্নফাঁস করে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। তার বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করব।

এদিকে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সোমবার (৮ জুলাই) পল্টন থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ ১৪ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া আরও ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে বিপিএসসি’র উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও আবেদের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম রয়েছেন। আগের দিন রোববার (৭ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

Link copied!