আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ‘ঢাকা বিভাগীয়’ মহাসমাবেশ নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে টানটান উত্তেজনা। এরই মধ্যে বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘাত ও সংঘর্ষ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মকবুল হোসেন নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। ফলে দেশব্যাপী বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশগুলো শুরুতে গুরুত্ব না দিলেও এখন আর ঢাকার সমাবেশকে হালকাভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
দেখা গেছে, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশের দুই দিন আগেই বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আটটি পয়েন্টে পাহারা বসিয়ে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নগর ও থানা, ওয়ার্ড নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে মিছিল সমাবেশ করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে নেমে অবস্থান নিয়েছে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
রাজধানীর আটটি পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে— ডেমরা-শ্যামপুর-যাত্রাবাড়ী, উত্তরা-আজমপুর-বিমানবন্দর, সদরঘাট-সোয়ারীঘাট-বাবুপুরা ব্রিজ, গাবতলী-আমিনবাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রবেশমুখ ফার্মগেট, মহাখালী, আশুলিয়া, আবদুল্লাপুর এলাকা ও তুরাগ থানা।
এর আগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ মোকাবিলায় ১০ ডিসেম্বর শনিবার ভোর থেকেই রাজধানীর ওই আটটি পয়েন্টে পাহারা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বুধবারের সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই সর্তক অবস্থায় আছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ১২৯টি ওয়ার্ড এবং ৫০টি থানা এলাকায় অবস্থান নিচ্ছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৭৫টি ওয়ার্ড ও ২৪টি থানা আর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৫৪টি ওয়ার্ড ও ২৬টি থানায় দলের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে সর্তক অবস্থায় বলে জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানাগুলোর সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ কর্মসূচি সমন্বয় করবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডেমরার প্রবেশপথ সুলতানা কামাল সেতুর পাশে অবস্থান নিয়েছেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এবং সড়কে নৈরাজ্য প্রতিরোধে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে আমরা ভোর থেকেই ডেমরা চৌরাস্তায় নেতাকর্মীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে অবস্থান নিয়েছি।”
গেন্ডারিয়া থানাধীন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, “আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নিদের্শ মতো বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতা রুখতে ভোর থেকে অবস্থান নিয়েছি।”
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, “গোটা দেশবাসী দেখেছে, সমাবেশের দুই দিন আগেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা কিভাবে সহিংসতা করেছে। এক পথচারীর মৃত্যুও হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মহান বিজয়ের মাসে যারা নৈরাজ্য করে, মানুষ হত্যা করে— তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এখন থেকে আমরা রাজধানীতে বিএনপির কোনো কর্মীকে ঢুকতে দেবো না, সেজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারাও ঢাকার আশপাশের এলাকার নেতাদেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই সব এলাকা থেকে ঢাকায় যেন কোনো লোক না আসতে পারে, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।”
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের সাবেক ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে শুক্রবার গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে বৃহৎ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তবে ওই সমাবেশের একদিন আগেই বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ৭৫টি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা বসিয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগও শুক্রবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যদিও তারা ভোর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সর্তক অবস্থান আছেন।
নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। তাই জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সর্তক অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যেকোনো ষড়যন্ত্র-নৈরাজ্য প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবসময় প্রস্তুত আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেন, “নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি আটটি এলাকাকে ভাগ করে পাহারা দিবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পাহারা দেওয়া হবে টিমভিত্তিক। স্থানীয় নেতারা ওই টিমের দায়িত্বে থাকবেন।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি নাকি রাজপথ ও ঢাকা দখল করবে। ফখরুল সাহেবকে আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় পাহারায় থাকবে।”