• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জরাজীর্ণ শহরে স্বস্তির নিঃশ্বাস আহসান মঞ্জিল


সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
জরাজীর্ণ শহরে স্বস্তির নিঃশ্বাস আহসান মঞ্জিল

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান আহসান মঞ্জিল। নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ঢাকার নবাবদের এই বাড়িটি। প্রতিদিন এই স্থাপনাটি দেখতে আসেন অনেক মানুষ। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলি এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে এর অবস্থান।

অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার দর্শনার্থীর সংখ্যা একটু বেশি থাকে। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত আহসান মঞ্জিলে গিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়।

জানা যায়, আহসান মঞ্জিলকে ঘিরে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কথা। এলাকার বাসিন্দা মুকুল মিয়া ও নোবেল বলেন, পুরান ঢাকার ইতিহাস সমৃদ্ধ হওয়ার পেছনে আহসান মঞ্জিলের ভূমিকা অতুলনীয়। বর্তমান সময়ে মুক্ত পরিবেশে আড্ডা দেওয়ার উৎকৃষ্ট স্থানে পরিণত হয়েছে এই স্থাপনাটি। আহসান মঞ্জিল ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

এ প্রজন্মের কাছে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস ও এর সৌন্দর্য অনন্য। তারা বলেন, আহসান মঞ্জিল থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পথ শুরু। ১৯০৬ সালে সেখান থেকেই মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।

বনশ্রী থেকে আসা তৌহিদ বলেন, “এখানে আসার আগে গুগলে সার্চ করে এই নবাবদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে নিয়েছি। যদিও আগেও জানতাম, কিন্তু আবার সেটা পড়ে নিয়েছি। অনেকবার বন্ধুদের সঙ্গে আসা হয়েছে। এবার আমার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আসলাম।”

নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে সুমাইয়া খাতুন সন্তানদের নিয়ে এসেছেন আহসান মঞ্জিল দেখতে। তিনি বলেন, “দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে আসা সবসময়ই আনন্দের। আমি আরও ৪-৫ বার এসেছি আহসান মঞ্জিলে। তখন বাচ্চারা ছোট ছিল। তাদের কিছু মনে নেই, এখন বড় হয়েছে। আর তাই তাদের ইতিহাস দেখানো ও জানানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।”

রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ঘুরতে আসা সাদেক হাসান বলেন, “আমরা চার বন্ধু একসঙ্গে ঘুরতে এসেছি। ঢাকার অনেক জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আহসান মঞ্জিলে আসা হয়নি। এবার ছুটির দিনে এলাম। নবাবী আমলের অনেক কিছুই দেখলাম।”

শিশু আমেনা এসেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে। সে বলে, “এখানে খুব ভালো লাগছে। অনেকক্ষণ ধরে এসেছি। ভেতরে পুরনো অনেক নিদর্শন দেখেছি। একটু পর বুড়িগঙ্গা নদীতে ঘুরতে যাব “

জানা যায়, ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গণি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তার প্রিয় ছেলে খাজা আহসান উল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। তখন নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রংমহল ও পুরোনো ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।

১৮৮৮ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহসান মঞ্জিলই ঢাকার প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য। যেখানে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা হয় নবাবদের হাতে। মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের সব সময়ই আকৃষ্ট করত। লর্ড কার্জন ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে। ১৯৯২ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

Link copied!