দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’। ইতোমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তাসহ বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি একেবারেই শেষ করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন কেন্দ্রের মূলমঞ্চে প্রথম সারিতে আসন গ্রহণ করবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দ্বিতীয়টি সারিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বসবেন। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ সারিতে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সম্মলেনের মঞ্চ ও সাজসজ্জার বিষয়ে উপকমিটির সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, “এবারের মঞ্চ দেখতে অনেকটা পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে করা হয়েছে। মূল মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট ও প্রস্থ ৪৪ ফুট এবং উচ্চতা ৭ ফুট। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হবে। এরপর আধঘণ্টার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। এরপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।”
মির্জা আজম আরও বলেন, “সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটবে। দ্বিতীয় বা কাউন্সিল অধিবেশন হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। এতে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কৃচ্ছতা সাধন করতে এ সম্মেলনে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে দেশের ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
এ বিষয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “সম্মেলন সাদামাটাভাবে হলেও নেতাকর্মীদের ঢল নামবে। এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। কারণ, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবে এবার সাদামাটা সম্মেলন হচ্ছে।”
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি স্মার্ট দল। আওয়ামী লীগই ভাবে— জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কী করতে হবে? আওয়ামী লীগের হাত ধরে যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, সেভাবে স্মার্ট বাংলাদেশও হবে।”
সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে উন্নয়নচিত্র :
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যানের বাইরের অংশে প্রায় প্রতিটি দেওয়ালে ও ব্যানার ফেস্টুনে শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়নের নানা কর্মযজ্ঞ। তবে সম্মেলনের বিতরে-বাইরের চারপাশে ব্যাপক দর্শনার্থীদের আগমনে মনে হচ্ছে এ যেন আরেক সম্মেলন হচ্ছে। এদিন সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে ৫টি প্রবেশ গেট ঘিরে। মূল মঞ্চের কাছে যেতেই দেখা যায় কর্মীরা বিভিন্ন নির্দেশক প্রস্তুত করছেন। মূলমঞ্চের বামে একটি কর্নার তৈরি করা হয়েছে। সেখানে একই সঙ্গে পতাকা টাঙানোর জন্য ৮০টি স্ট্যান্ড বসানোর প্রস্তুতি চলছে। কর্নারের বাউন্ডারির ব্যানারে শোভা পাচ্ছে কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম বন্দর, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট, ভাঙা চৌরাস্তা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছবি। তবে কালো রঙের নৌকার আদলে গড়ে তোলা হয়েছে আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন মঞ্চ। মঞ্চের পেছনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতুর প্রতিকৃতি। আর সেতুর ওপর স্থাপন করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁধা স্মৃতিস্তম্ভ স্মৃতিসৌধ।
মঞ্চের ঠিক সামনে স্থাপন করা হয়েছে সাতটি ফেস্টুন। যার ছয়টিতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এসব ফেস্টুনে তুলে ধরা হয়েছে-তরুণ প্রজন্মের মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতু ও মহাসড়ক। এর ঠিক মাঝখানেই স্থাপন করা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশের ফেস্টুন। লাল-সবুজের ফেস্টুনে লেখা হয়েছে-আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
এর পরের সম্মেলনে আগত অতিথিদের বসার আসন বিন্যাস করা হয়েছে। এছাড়া সম্মেলনস্থলের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার আদলে জায়গায় জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন ফেস্টুন। যেখানে লেখা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির নানা উক্তি।
শেষ সময়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও সাউন্ড সিস্টেমসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১২টি এলইডি স্ক্রিন রাখা হয়েছে। সেগুলোও ঠিকঠাক চলছে কি না তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কাউন্সিলে আগতদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫০টির বেশি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বিএনপিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ :
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে এসে আমন্ত্রণ জানায়। আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেন বিএনপির দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালে প্রিন্স।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।
এসময় বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে বলেন, “আমাদের সব নেতা কারাগারে। সম্মেলনে কীভাবে যাব?”
জবাবে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম বলেন, “এটা সরকারের ব্যাপার। আমরা দলের পক্ষ থেকে এসেছি। আশা করি আপনাদের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যাবে।” এরপর প্রিন্স বলেন, “দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে জানানো হবে।”
আমন্ত্রণপত্র গ্রহণের সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও সহতথ্যবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুলসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। খাবার পানি, তিনটি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও জরুরি সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সামগ্রিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। উদ্যানের লেকপাড়েও করা হয়েছে প্যান্ডেল। ওই প্যান্ডেলেও দেওয়া হয়েছে ৩টি বড় স্ক্রিন। সেখানে চেয়ারগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন পেছনের কারও কোনো অসুবিধা না হয় স্ক্রিন দেখতে। নিরাপত্তার জন্য পুরো এলাকাজুড়ে প্রায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মূলমঞ্চ। সেই নৌকা মাঝখানে বসবেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।”
নানক আরও বলেন, “মঞ্চের পেছনের ব্যানারে শোভা পাচ্ছে পদ্মা সেতু। তারপর রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। স্মৃতিসৌধের বাম পাশে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। তার বামে উড়ছে জাতীয় পতাকা। তার বামে আছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়া বামে আরও আছে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শামসুল হক এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। এছাড়াও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ডান পাশের একটি ছবিতে সাদা পায়রা উড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ডানে আছে বোন শেখ রেহানা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তারও ডানে আছে জাতীয় ৪ নেতা— সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছবি।”
নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে দিক-নির্দেশনা :
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে দলের ইশতেহার তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, “সম্মেলনে জাতির সামনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কী ভূমিকা রাখবে, তা তুলে ধরা হবে। সামনের নির্বাচনে দলের ইশতেহারও তুলে ধরা হবে। বিএনপির নেতৃত্বে দেশবিরোধী অপশক্তি যেসব চক্রান্ত করছে, তাদের বিষয়ে সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আসবে।”
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যুক্ত হলো থিম সং :
আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে যুক্ত হয়েছে থিম সং। দলটির ৭৩ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম মুক্তিবোধ আর প্রগতিবাদী রাজনীতির মূলস্বরকে কেন্দ্র করে এ ‘থিম সং’ রচিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে থিম সংটি আপলোড করা হয়েছে। শনিবার অনুষ্ঠেয় সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগের উদ্যোগে নবনির্মিত ‘থিম সং’ যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের গীতিকাব্যে সৃষ্ট থিম সংটিতে সুর করেছেন দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী।
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পরিকল্পনায় গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন পাভেল আরিন। গানটিতে মোহনবীণা বাজিয়েছেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ভারতের কিংবদনন্তি শাস্ত্রীয় সংগীতব্যক্তিত্ব পণ্ডিত বিশ্ব মোহন ভাট। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন পান্থ কানাই, চন্দনা মজুমদার, দিলশাদ নাহার কণা ও মাশা ইসলাম। ইয়াসির মাহমুদ খানের সমন্বয়ে চিত্র পরিচালনা করেছেন ইশতিয়াক মাহমুদ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, থিম সংটির শব্দচয়ন, ভাষার শৈল্পিক উপস্থাপনার পাশাপাশি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতের বর্ণনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। গানটির শব্দ গাঁথুনি যেমন অসাধারণ, তেমনই সুরের মূর্ছনায় বিগলিত হবেন নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্যরাও। থিম সংয়ের ভিডিও-চিত্র দেখেও ইতিবাচক মতামত জানান নেতারা।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। দলের দীর্ঘ ৭৩ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুঁজলে প্রত্যেকটি সম্মেলনে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন চোখে পড়বে। তবে এবারই প্রথম দলের দপ্তর বিভাগ থেকে একটি থিম সং করা হয়েছে।”
নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) :
আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন, “সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগদান করবেন, সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী আসবে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। ইতোপূর্বে অনেকবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে, আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। এজন্য আমরা তার নিরাপত্তাটাকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকি।”
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “শনিবার নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ফোর্স ডিপ্লয়মেন্ট করেছি। আমাদের এসবি-র্যাবসহ সবাই মিলে এই ভেন্যুতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছি। প্রত্যেকটা গেটে সার্চওয়ে ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। এছাড়া আমাদের ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে চারদিকে সুইপিং ও ম্যানুয়াল সুইপিং করা হয়েছে। এক কথায় আমরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি যাতে আওয়ামী লীগ উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিল সম্পন্ন করতে পারে।”
অপরদিকে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেনও। তিনি বলেন, “এখানে বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও পেট্রোল পার্টি থাকবে। ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে সুইপিং করা হবে। বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও সাদা পোশাকে সদস্যরা মোতায়েন থাকবে এবং আমাদের কমান্ডো টিম প্রস্তুত থাকবে। অর্থাৎ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ও সম্মেলনের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র্যাব সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।”
নিরাপত্তাজনিত কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে খুরশীদ হোসেন বলেন, “ন্যাশনাল যেকোনো ইভেন্ট বা এ ধরনের সম্মেলনে নিরাপত্তাটার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা চাই যেকোনো একটা অনুষ্ঠান যাতে মসৃণভাবে হতে পারে। যারা আসবে নিরাপত্তার সঙ্গে আসবে, আবার নিরাপত্তার সঙ্গেই চলে যাবে। কোনো অপশক্তি এসে যেন ঝামেলা করতে না পারে, এটাকে মাথায় রেখেই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
শনিবার যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে :
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) ডিএমপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় ট্রাফিক নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের নিম্ন লিখিত এলাকাগুলোর রাস্তা বন্ধ, রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে— কাটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য ক্রসিং ও উপাচার্য ভবন ক্রসিং।
এ অবস্থায় নগরবাসীকে শনিবার এসব এলাকা/রোড পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে আসা গাড়ি নিম্ন লিখিত এলাকাগুলোতে পার্কিং করবে— মহসিন হল মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ভিআইপি), মলচত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, ফুলার রোড রাস্তার দুই পাশে, দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে, সবজি বাগান থেকে নেভাল গ্যাপ পর্যন্ত, সুগন্ধা থেকে অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং পর্যন্ত, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল গলি, নেভাল গেট এলাকা, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশে, মিন্টো রোড ক্রসিং থেকে পুলিশ ভবন ক্রসিং এবং দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার রাস্তার দুই পাশে।