দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দলটির এবারের ইশতেহারের থিম হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এবং স্লোগান হবে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য কমানো, আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ বেশ কিছু খাতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীনদের এ ইশতেহার ঘোষণা হবে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর)। এদিন সকাল ৯টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জাতির সামনে নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবেন।
অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বক্তব্য রাখবেন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইশতেহারে আগামী পাঁচ বছরের সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকবে। দ্রব্যমূল্য কমানো ও সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, ব্যাংকসহ আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পের প্রসারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস রোধ করা এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালেও ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আরোহণ করে দলটি। একইভাবে ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় ইশতেহারে।
এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় দলটির। স্মার্ট বাংলাদেশের মধ্যে থাকছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠা।
এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সরকার তাদের চলমান কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় লক্ষ্য স্থির করেছে। যেমন- ২০২৮ সালের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৭১ বিলিয়ন ডলার, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে, ২০২৮ সাল নাগাদ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮.১ শতাংশে উন্নীত হবে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশে উন্নীত হবে এবং প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে ১৪ শতাংশ।
নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য- ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে হতদরিদ্রের অবসান হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্য নেমে আসবে ৩ শতাংশে। তাছাড়া শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে আগ্রহী করে তোলায়ও মনোযোগ দেবে দলটি।
আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা এবারের ইশতেহারে সাধারণ জনগণ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়েছি। তারা অর্থনীতি, অবকাঠামো, কৃষি, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুতের উৎপাদন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তাদের এসব মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।”
আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, “ইশতেহারে প্রথমে পটভূমি থাকবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, বিদেশি শক্তি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং দেশের মধ্যে যারা বিদেশিদের স্বার্থ সিদ্ধির কাজ করে এদের বিষয়ে কী কর্মসূচি নেবো, কী কৌশল অবলম্বন করবো, কীভাবে মোকাবিলা করবো- এগুলো থাকছে। ইশতেহারে আমাদের কিছু অগ্রাধিকার থাকবে- যেমন কৃষি, তরুণ, মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট কর্মসূচি ও প্রতিশ্রুতি থাকছে। বর্তমান দেশি-বিদেশি পরিস্থিতিসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা ইশতেহার প্রণয়ন করেছি।”
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, “এবারের ইশতেহারে যুব ও নারীদের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নানা পরিকল্পনা- যেমন কর্মসংস্থান, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ শিল্পায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে। যেমন-কর্মসংস্থান, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ শিল্পায়নের ওপর জোর দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের কী অঙ্গীকার জনগণের কাছে সেটা থাকবে, তা খুব সুনির্দিষ্টভাবে বলা থাকবে। পাশাপাশি পাঁচ বছর পর কী করব বা দশ বছরে কী করব এটার একটা রূপরেখা জানানো হবে।”
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, “আমাদের অর্থনীতি এবং আর্থিকখাতে সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ যাবত অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনীতিকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে। দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের আজকের যে অর্থনৈতিক উল্লম্ফন হয়েছে, সেটি সরকারের বহুমাত্রিক পদক্ষেপের অবদানে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির গতিশীলতা রক্ষা ও শৃঙ্খলায় গুরুত্ব থাকবে এই ইশতেহারে।”
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আরেক সদস্য অর্থনীতিবিদ সাব্বির আহমেদ বলেন, “ইশতেহারে মানুষ ও সমাজের প্রয়োজন তুলে এনেছি। বিশেষ করে কর্মসংস্থান কেন্দ্রে রেখে সবকিছুকে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিশুদের বিষয়টি যখন লিখেছি, সেখানেও কর্মসংস্থান রেখেছি। এটাই আমাদের সেন্টার পয়েন্ট। এছাড়া দ্রব্যমূলের কারণে মানুষ কষ্ট পেয়েছে। সবার কষ্ট লাঘবে যা যা প্রয়োজনীয় আমরা উদ্যোগ রেখেছি।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যাংকসহ আর্থিকখাতের শৃঙ্খলার জন্যও আমাদের মতামত আছে। শিল্পায়নের প্রসারেও আমাদের বক্তব্য থাকছে। চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবাখাতে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির অধিক ব্যবহার বা সেবায় আধুনিকায়নে গুরুত্ব দিচ্ছি। উদ্ভাবনী ও আইডিয়াও গুরুত্ব দেবো। কৃষিতেও আধুনিকায়ন হোক চাই। সেখানে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার করতে চাই।”
২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালেও ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতারোহণ করে দলটি। একইভাবে ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেওয়া হয়। যদিও এবারের টার্গেট স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন।