• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বৃহস্পতিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহের আভাস, তাপমাত্রা কমবে প্রায় ৩ ডিগ্রি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৪, ০৬:৩০ এএম
বৃহস্পতিবার থেকে  শৈত্যপ্রবাহের আভাস, তাপমাত্রা কমবে প্রায় ৩ ডিগ্রি

দেশের প্রায় সব বিভাগের তাপমাত্রা দ্রুত কমছে। য়েক দিনে জেঁকে বসেছে শীতের অনুভূতি। এমন তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কয়েক দিনে দেশের উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা কমে এসেছে। একই সঙ্গে কমে এসেছে রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলের তাপমাত্রাও। 

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪৪টি স্টেশনের মধ্যে ৩০টিতেই তাপমাত্রা সাড়ে ১৩ ডিগ্রি বা তার নিচে রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি স্থানে। 

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা আরও কমবে এবং বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

দেশে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ ছিল ৩০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, আগামী বুধবার থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শুরু হতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে দেখা গেছে, নওগা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ঘন কুয়াশা পড়ছে। এতে সারা দিন রোদের দেখা মেলেনি।

ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক জানান, জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। একদিকে সীমান্ত অপরদিকে হিমালয়ের হিম বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা দেখা মেলে না সূর্যের আলো। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যায় না।

জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট একেবারে ফাঁকা, মানুষজন নেই। কুয়াশার কারণে বিভিন্ন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীতের তীব্রতার জন্য নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজে যেতে পারছেন না। শ্রম বিক্রি করতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। এ ছাড়া প্রতিদিনই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৪ দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। এবার শীতের তীব্রতা বেশি হতে পারে। আজ (সোমবার) ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, প্রতিদিন শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শিশু-বৃদ্ধ রোগীদের চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু। সেবা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিবেদক জানান, হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দিনাজপুরের জনজীবন। থেমে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মচাঞ্চল্য। বাড়ছে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। সোমবার সকাল ৬টায় জেলার তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন।

তিনি বলেন, দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭ শতাংশ ও বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার। গতকাল একই সময় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নওগাঁ প্রতিবেদক জানান, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে নওগাঁর পথঘাট। কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ চিত্র চোখে পড়ে। এদিন সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত দুই দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। গত দুই দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে অব্যাহত রয়েছে শীতের তীব্রতা।

চাঁদপুর প্রতিবেদক জানান, চাঁদপুরে বাড়ছে ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। এদিন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। এদিকে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে এক নারী অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোয়েব আহম্মেদ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে ১৫-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চাঁদপুরের জনপদ। তবে দুপুরের দিকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ছে।

এদিকে রোববার সকালে শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে জেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভার রান্ধুনীমুড়া মুন্সীর বাড়ির নাজমুন্নাহার (৫০) নামে এক নারী অগ্নিদগ্ধ হন। তাকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকের বরাতে পরিবার জানিয়েছে, ওই নারীর শরীরের প্রায় ৮০ ভাগ ঝলসে গেছে।

রংপুর অফিস জানিয়েছে, শীত ও হিমেল হাওয়ায় জেলার জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভরদুপুরেও সড়ক-মহাসড়কে লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে স্বাভাবিক দিনের চেয়ে নগরজীবনের ব্যস্ততা বেড়েছে একটু দেরি করেই। শীত মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ ৪ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত পাওয়া গেছে ১ হাজার ৬০০টি।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে যেমন তেমন, রাতে তাপমাত্রা দ্রুত কমছে। গত কয়েক দিন থেকে আকাশ রয়েছে মেঘলা। শীতের কারণে খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষ কাজ না পেয়ে বেকায়দায় রয়েছেন।

শেরপুর প্রতিবেদক জানান, শেরপুর জেলাজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। সোমবার সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে উত্তরের পাহাড় থেকে বয়ে আসছে ঠান্ডা বাতাস। ফলে কনকনে শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। সারা দিন কুয়াশা ঝরতে দেখা গেছে। বিকাল ৫টার দিকে হালকা বৃষ্টি পড়া শুরু করে।

জয়পুরহাট প্রতিবেদক জানান, অগ্রহায়ণের শেষ দিকে এসে কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে জয়পুরহাটের বিভিন্ন অঞ্চল। এদিন কয়েকটি স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। শীত ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

জেলায় হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসায় সকলকে গরম কাপড় ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুহা. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘শরীরে যাতে ঠান্ডা না লাগে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডায় বিভিন্ন ভাইরাস আক্রমণ করে। এতে অনেকের নানা রোগ হয়। আর যারা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তারা গরম পানি পান করবেন। আর ডায়রিয়া রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। এ ছাড়া যারা বিভিন্ন যানবাহন চালান, বিশেষ করে দূরপাল্লার যানবাহনের চালকরা দুর্ঘটনা থেকে এড়িয়ে চলতে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।’

Link copied!