• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩০, ৭ রজব ১৪৪৬

২০২৪ সালে সড়কে ৮৫৪৩ জনের প্রাণহানি, বেশি দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলে


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৮:৫৪ পিএম
২০২৪ সালে সড়কে ৮৫৪৩ জনের প্রাণহানি, বেশি দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলে
সড়ক দুর্ঘটনা। ফাইল ফটো

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ৩ হাজার ১৫১ জন।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি জানান, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, নিহতের সংখ্যা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আহতের সংখ্যা ১৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে রেলপথে ৪৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২ হাজার ৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত এবং ৩ হাজার ১৫১ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদন বলা হয়, বিগত ১০ বছরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১৫ লাখ থেকে বেড়ে ৬০ লাখ হয়েছে। নতুন করে ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় চলাচলের পাশাপাশি ছোট যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এসব যানবাহনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ১৬৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ৯৫২ জন চালক, ১ হাজার ৮৭৯ জন পথচারী, ৬২২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৫৫ জন শিক্ষার্থী, ১২৬ জন শিক্ষক, ১ হাজার ২০৬ জন নারী, ৬৫৮ জন শিশু, ৪৮ জন সাংবাদিক, ১৭ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১ জন চিত্রনায়ক, ৬ জন আইনজীবী, ১২ জন প্রকৌশলী এবং ২১৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫০ দশমিক ৮৪ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়া, ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ সংঘর্ষ, ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ ট্রেনের সঙ্গে যানবাহনের সংঘর্ষের কারণে হয়েছে।

এসব দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ফিডার রোডে এবং ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঢাকা মহানগরীতে এবং ১ দশমিক ২০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঘটেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংবাদ সম্মেলনে ১৩টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো,

১। মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা।
২। দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা।
৩। সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্ধ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা।
৪। সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানা কার্যক্রম শুরু করা।
৫। দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৬। গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭। সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮। গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৯। সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করা।
১০। স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া।
১১। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা।


১২। সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু করা।
১৩। গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সাথে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রী সাধারনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!