গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলার ৮ বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি এ হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হয়।
এই হামলা করেছিল আইএস (ইসলামিক স্টেট) মতাদর্শী জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবি। এই হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫টি অভিযানে সংগঠনটির ৬৪ জন সদস্য নিহত হন। এর বাইরে শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের বেশির ভাগই গ্রেপ্তার হন। এতে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্য বলছে, দেশে জঙ্গি হুমকি এখনো আছে।
এদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও, এখনও তা প্রকাশ হয়নি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর, ফাঁসির দণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি দখল করে মুহুর্মুহু গুলি করে জঙ্গিরা। সকাল পর্যন্ত চলে গোলাগুলি। জিম্মি করে বিদেশিসহ কমপক্ষে ২৫ জনকে। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর অপারেশনে নিহত হন ৫ জঙ্গি।
হলি আর্টিজন হামলার পর কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০২১ এর পর একটিও জঙ্গি হামলা করতে পারেনি জঙ্গিরা। তবে এই ৮ বছরে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে কয়েকশ জঙ্গি।
তবে ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দিন দুপুরে আদালত পাড়া থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা আবারও চিন্তায় ফেলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, দেশের জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।
এদিকে, এহামলায় জড়িত ৭ জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হাইকোর্টের রায়ের কপি এখনও হাতে পাওয়া যায়নি। তাই এর বিরুদ্ধে এখনও আপিল করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “জঙ্গি হামলায় যারা জড়িত তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া প্রয়োজন ছিল। পুরো রায় পাওয়ার পর আমরা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব, যোগাযোগ করব। ওনাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। কিন্তু এখন আমরা রায় পুরোটা পাইনি, সেটা পাওয়ার পর আমরা কি করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা ড. তৌহিদুল হক বলছেন, জঙ্গিবাদমুক্ত সমাজ এখনও তৈরি হয়নি। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয় সমাজের সর্বস্তরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে।
দেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি ও বর্তমানে তাঁদের তৎপরতা নিয়ে একটি গণমাধ্যমে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এখনো আছে। যে চারটি সংগঠন আগে খুব বেশি সক্রিয় ছিল, যারা বিভিন্ন সময় দেশে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের মধ্যে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) তুলনায় আনসার আল–ইসলামের তৎপরতা এখন বেশি। এই সংগঠনই এখন ঝুঁকির জায়গা।”
জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, “জঙ্গিদের দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকলেও সাইবার স্পেসে তারা সক্রিয় আছে। ধীরগতিতে হলেও তাদের সদস্য সংগ্রহ অব্যাহত আছে। এটাই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও তাদের বড় হামলা করার সক্ষমতা এখন আর নেই। সামগ্রিকভাবে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখনও মাঝে মাঝে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। তাই জঙ্গি নির্মূলে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।