• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

১১৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪, ০৫:০৯ পিএম
১১৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
বাংলাদেশ সরকারের লোগো। ফাইল ফটো

মহেশখালীতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্যাংক ফার্ম ও গভীর সমুদ্রে একটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুংরিং এবং ১১০ কিলোমিটারের দুইটি ডাবল পাইপলাইন স্থাপনের একটি প্রস্তাবসহ ৬টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১৪৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সাঈদ মাহবুব খান জানান, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২০২৪ সালের প্রথম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির দ্বিতীয় সভা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ‍দুইটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ছয়টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তিনটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুইটি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ছয়টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ এক হাজার ১৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৪ টাকা।

সাঈদ মাহবুব খান বলেন, “হাওর এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে  নিপ্পন কোই কোং. লি., বিইটিএস কনসালটিং সার্ভিসেস লিমিটেড এবং সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্সেস স্টাডিসকে ৮৮ কোটি ৩২ লাখ ২৮ হাজার ১৪০ টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি হওয়ায় প্রথম ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৩ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৬৫৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি হয় এবং প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়। প্রকল্পের সাফল্য ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে একটি পিডিপিপি প্রণয়ন করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ছয় কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার ৬৬৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।”

সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৩৩০.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৯৯ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, “সৌদি আরব থেকে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তির আওতায় সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টন ৩৪৭ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে ব্যয় হবে এক কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৪ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।”

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের চতুর্থ) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২২টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপি চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৫টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ৯ দশমিক ৯৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে  ৪২৯ কোটি ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ টাকা।

সাঈদ মাহবুব বলেন, “‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্ট চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স, জার্মানিকে ৫২ লাখ ২৯ হাজার ২৪০ ইউরোতে প্রথম সাপ্লিমেন্টারি অ্যাগ্রিমেন্ট  করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি হওয়ায় প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট বাবদ ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ ইউরো বাড়ানো হয়। যা  বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৪ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার ৮০৯ টাকা।”

অতিরিক্ত সচিব বলেন, “‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের আওতায় ইপিসি ঠিকাদারের সঙ্গে চতুর্থ সাপ্লিমেন্ট চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্যাংক ফার্ম ও গভীর সমুদ্রে একটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং এবং ১১০ কিলোমিটার দুইটি ডাবল পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এজন্য চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরো (সিপিপি)-এর সঙ্গে ৩টি সাপ্লিমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ইপিসি কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন ও পিপিসির সুপারিশে আরও ১৪টি আইটেমের কাজ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কো.লি.-এর সঙ্গে চতুর্থ সাপ্লিমেন্টারি অ্যাগ্রিমেন্ট করতে হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ৩৪ দশমিক ৮০২১০৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮২ কোটি ৮২ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান লাইটারেজ অপারেশনের পরিবর্তে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহনের ফলে এ খাতে পরিবহন খরচ ও সময় হ্রাস পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।”

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দুইটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড, ওমানকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দেশের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের নিমিত্ত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করা হয়। বর্তমানে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বানের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধিত) আইন-২০২১’-এর আওতায় ওমানের প্রতিষ্ঠানটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

সভায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ‘ইভিএম/মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ’ ভৌত সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হলেও কমিটি প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দেয়নি। 

Link copied!