দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের (প্রার্থিতা বৈধ বা বাতিল) বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মোট ৫৬১টি আপিল হয়েছে। এর মধ্যে বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে অন্তত ৩০টি। কোনো কোনো আসনের প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধেও আপিল করেছেন। বাকি আপিলগুলো হয়েছে প্রার্থিতা ফিরে পেতে।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে এসব আপিলের শুনানি। প্রতিদিন ১০০ আবেদন শুনানি করা হবে।
শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। তখন ৫৪৬টি আপিল হয়েছিল। এর মধ্যে বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল ছিল ১২টি।
এবার বাছাইয়ে ৭৩১ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীই ছিলেন ৪২৩ জন। বাকিগুলো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। সব মিলিয়ে আবেদন করেছেন তিন শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগের ৯, জাতীয় পার্টির ৩১ ও তৃণমূল বিএনপির ২৩ জন্য প্রার্থী।
শনিবার আপিল আবেদন নেওয়া শেষ হয়েছে।
বৈধ যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে আবেদন
যেসব বৈধ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলে ইসিতে আবেদন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল-৪ আসনে পংকজ দেবনাথ, বরিশাল-৫ আসনে সাদিক আবদুল্লাহ, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে দেওয়ান শামছুল আবেদীন, পাবনা-২ আসনে খন্দকার আজিজুল হক আরজু, ফরিদপুর-৩ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কক্সবাজার-১ আসনে জাফর আলম, দিনাজপুর-৩ আসনে বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মো. আবুল হাশেম, চাঁদপুর-৪ আসনে জালাল আহমেদ, চাঁদপুর-৫ আসনে গাজী মঈন উদ্দিন।
আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে আবেদন হয়েছে তারা হলেন বরিশাল-৫ আসনে জাহিদ ফারুক, ঝালকাঠি-১ আসনে শাহজাহান ওমর, যশোর-৪ আসনে এনামুল হক বাবুল (২টি আবেদন), ময়মনসিংহ-৯ আসনে আব্দুস সালাম, সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান, ফরিদপুর-৩ আসনে শামসুল হক, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মহিবুল হাসান চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ আসনে ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৪ আসনে রাজী মোহাম্মদ, কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হোসেন খান, নোয়াখালী-৪ আসনে একরামুল করিম চৌধুরী ও লালমনিরহাট-১ আসনে মো. মোতাহার হোসেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী পটুয়াখালী-১ আসনে রুহুল আমিন হাওলাদার, কিশোরগঞ্জ-৩ জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে আবেদন হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। তবে কোন দলের কতটি আবেদন পড়েছে, তা পরে জানা যাবে বলেও জানান সচিব।
আমুকে তলব, নাছিমকে শোকজ
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমুকে ইসিতে তবল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ঝালকাঠি-২ আসনের এই প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা রিপোর্ট করেছেন। সেই ভিত্তিতে ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
রোববার দুপুরে তাকে ব্যক্তিগতভাবে অথবা মনোনীত একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সাতক্ষীরা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান বাবুকে শোকজ করেছে নির্বাচনী তদন্ত কমিটি।
সোমবার সেনা মোতায়েন নিয়ে ইসির বৈঠক
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয় নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসবে কমিশন। সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কি হবে না বা হলে কীভাবে মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।