দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক দিনে ৩৩টি আসনে আওয়ামী লীগের ৫২ জন নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মনোনয়নবঞ্চিত অন্তত ১০ জন সংসদ সদস্যও রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) তাদের প্রায় সবাই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
২৬ নভেম্বর দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা দলের মনোনয়নের বাইরে স্বতন্ত্র (ডামি) প্রার্থী হওয়ার পরামর্শ দেন। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার আনার বিষয়টি অন্যতম লক্ষ্য। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যাতে বিজয়ী হতে না পারেন, এবার সে বিষয়ও চিন্তায় রেখেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে পারবেন, সেটিও দলটি ঠিক করে দেওয়ার কথা বলছে। এ ব্যাপারে দলটি একটি নীতিমালা দেবে।
মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘কারা কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইছেন, তা দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের হাতে আছে।’ তিনি এ-ও বলেন, ‘নির্বাচন ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছেন। এর মধ্যে আমাদেরও একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে। সে সিদ্ধান্তের জন্য ১৭ তারিখ (প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন) পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যেই আমরা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন, সংযোজন, অ্যাকোমোডেশন—সবকিছু করতে পারি।’’
এদিকে বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘‘৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হলে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দল পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’’
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেওয়ার সময় আছে আর দুই দিন। এই দুই দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র নেওয়া নেতার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা ধারণা করছেন। আগের যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর)। মনোনয়নপত্র যারা সংগ্রহ করছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের কতজন মনোনয়নপত্র জমা দেন, তা সেদিন পরিষ্কার হবে। অবশ্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে ৩০০ আসনে কতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন, তা চূড়ান্ত হবে না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন যেসব সংসদ সদস্য
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও তিতাস) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. আবদুস সবুর। নৌকা না পেয়ে আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রুমানা আলী।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খান দলীয় টিকিট না পেলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। তিনি ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
এ ছাড়া ঝিনাইদহ-২ আসনে শফিকুল আজম খান, নওগাঁ-৪ আসনে ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক ও রাজশাহী-৩ আসনে আয়েনউদ্দিনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
কুমিল্লায় ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৭টি আসনেই আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
সেলিমা আহমাদ, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকসহ কুমিল্লার বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যরাই মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতারাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনেই দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রার্থী হয়েছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে দলের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্য তিনটিতেই স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বরিশালে লড়বেন সাদিক আবদুল্লাহ
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবার বরিশাল-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সাদিক আবদুল্লাহ ও তার কর্মী-সমর্থকেরা হতাশ হন। এ হতাশা কাটিয়ে রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখতে সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, সাদিক আবদুল্লাহকে সদর আসনে প্রার্থী করার বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি শিথিল করে দেওয়া হয়েছে, সে কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।