প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৬৫/১২০ বি ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড তদুপরি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া পেনাল কোডের ১২৪/১২০ ধারায় প্রত্যেককে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড তদুপরি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত।
এর আগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন জয়। ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেন। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি জবানবন্দি দেন। বেলা ৪টার দিকে তা শেষ হয়। এরপর জয় তার গাড়িবহর নিয়ে আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। অপরাধ ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় রিজভী আহাম্মদকে।
এ অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান। এ মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের নির্দেশদাতা হিসেবে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আর আসামি মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে পরামর্শদাতার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে রিজভী আহাম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে অন্য আসামিদের কাছে সেই তথ্য সরবরাহ করেন। অর্থায়ন ও পরামর্শদাতার অভিযোগ আনা হয়েছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মামলায় ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।