ছিনতাইয়ের হটস্পটে পরিণত হয়েছে রাজধানীর উত্তরার কয়েকটি এলাকা। রাত নামলেই ভয় আর আতঙ্ক বাড়তে থাকে। কারা, কখন, কোন দিক থেকে হঠাৎ এসে সর্বস্ব ছিনতাই করে নিয়ে যায় কিনা। কাঙ্ক্ষিত কিছু না পেয়ে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্তও করে ফেলে রেখে যায় কিনা।
কিছুদিন ধরে সন্ধ্যা নামলেই স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীর মধ্যে জেঁকে বসছে ছিনতাই আতঙ্ক। বিশেষ করে উত্তরা হাউস বিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর ব্রিজ ও বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকা রীতিমতো ছিনতাই হটস্পটে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব এলাকায় বহিরাগত ও মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। যারা সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাই করছে।
ঘটনা-১
আত্মীয়কে বিদায় জানাতে গত ২ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন সবজি বিক্রেতা আলমগীর। রাত ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে মাইক্রোবাসে করে আসেন কয়েকজন। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয়ে আলমগীরকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী আলমগীর বলেন, “এখনও আমি মাইক্রোবাস দেখলে চমকে উঠি। রাস্তায় বের হলেই মনে হয়, পেছন থেকে কেউ তাড়া করছে। চিকিৎসক দেখিয়েছি, খুব একটা লাভ হয়নি।”
ঘটনা-২
ব্যবসার কাজে পাবনা থেকে প্রতিমাসে বাসে করে ঢাকায় আসেন ব্যবসায়ী রফিক মোল্লা। গত ২৫ অক্টোবর পাবনা থেকে বাসে রওনা দিয়ে ভোরে নামেন রাজধানীর উত্তরা জসীম উদ্দীন রোডে। নামার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ধরে। এরপর তাকে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত করে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ সবকিছু কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। রফিক মোল্লা বলেন, “গত ২৫ অক্টোবরের ভোরের সেই ভয়ংকর ঘটনার ট্রমা এখনও কাটেনি।”
ঘটনা-৩
কাতারপ্রবাসী যাব্দুর আলী দুই বছর পর গত ২৬ অক্টোবর ভোরে দেশের মাটিতে নামেন। সকাল পৌনে ৮টার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ফুট ওভারব্রিজ পার হওয়ার সময় হঠাৎ তার ম্যানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন খোয়া যায়। মানিব্যাগে ছিল গুরুত্বপূর্ণ নথি। যা না পেলে কাতার ফিরে জটিলতা হবে তার। পরে তিনি সেসব গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধারের জন্য থানায় জিডি করেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা বলছেন, উত্তরায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির তিন হটস্পট হলো– উত্তরা হাউস বিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর ব্রিজ ও বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকা। জসীম উদ্দীন ও ৮ নম্বর সেক্টরের মুখেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
বিমানবন্দর গোলচত্বর থেকে আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত আতঙ্ক বেশি। দিনরাতে এখানে একাধিক টানা পার্টি ছুরি ও সুইচগিয়ার হাতে সক্রিয় থাকে। দিনে থাকে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও পকেটমার।
পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরার বিভিন্ন স্পটে ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িতরা বহিরাগত। টঙ্গী, দক্ষিণখান, উত্তরখান ও তুরাগ এলাকা থেকে এসে টানা পার্টির কাজ করে। মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে এসে সড়কের পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত পথচারীদের জিম্মি করে ২-৩ মিনিটেই সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদ আলী বলেন, উত্তরায় তিন স্পটে ছিনতাই বেশি হচ্ছে। জড়িতদের বেশির ভাগই উত্তরার আশপাশের বাসিন্দা। ভোর কিংবা রাতে বাইরে থেকে যাত্রীরা নামলে, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে এসে ছোঁ মেরে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। এসব স্পটে পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ না করায় ছিনতাই ঘটনার প্রতিদিনের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে গত অক্টোবর মাসে ৬৭ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের সাত দিন থেকে এক বছর পর্যন্ত সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তারপরও ছিনতাইয়ের ঘটনা থামছে না। সূত্র: সমকাল।