• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেশে ৩ কারণে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৪:১৪ পিএম
দেশে ৩ কারণে তীব্র  বিদ্যুৎ সংকট
সারা দেশে চলছে লোডশেডিং। ছবি: সংগৃহীত

বেশ কয়েকদিন ধরে তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। ফলে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় কলকারখানায় উৎপাদনে ভাটা পড়েছে।

অথচ দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বিপরীতে চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের কম। চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষমতার পরেও কেন লোডশেডিং বেড়েছে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকার অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় রেখে গেছে তারই ফলশ্রুতিতে বিদ্যুতের পুরো খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। খবর বিবিসির।

বর্তমানের বিদ্যুৎ সংকটের পেছনে তিনটা কারণকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো, ডলার সংকট, জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতা এবং অপরিকল্পিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও সরবরাহ লাইন না থাকা।

ডলার সংকট
দেশে সবচেয়ে বেশি প্রায় বারো হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। আগে যেখানে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। তবে এখন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ খাত আগে দিনে ১২০-১৩০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে। এখন তা নেমে এসেছে ৮০-৮৫ কোটি ঘনফুটে। মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দিনে গ্যাস আসে একশ দশ কোটি ঘনফুট। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল ২৭ মে থেকে বন্ধ হওয়ায় সরবরাহ হচ্ছে ৬০ কোটি ঘনফুট।

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিট। ফলে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) তিন হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি লোডশেডিং ছিল। ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে আসত দেড় হাজার মেগাওয়াট। তবে বকেয়া পরিশোধ না করায় মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট সরবরাহ করছে।

গ্যাস বিল, সরকারি–বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল, ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল সব কিছু মিলিয়ে পিডিবির বকেয়া টাকার পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে বকেয়া অর্থ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলছেন, “এখন অন্যতম প্রধান সমস্যাই অর্থ সংকট। তাই অন্য খাতে কমিয়ে এখানে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হবে। তেল-চালিত কেন্দ্রগুলো বেশি চালাতে হবে। ডলার জোগাড় করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে।

জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতা
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে পলিসিগত সবচেয়ে ভয়াবহ ভুল পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালী অর্থনীতির বিবেচনায় আমদানি নির্ভর করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনার সরকার অর্থনীতির ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গ্যাসের পাশাপাশি তেল ও কয়লার ব্যবহার বেড়েছে। এই জ্বালানির বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানির এই আমদানি নির্ভরতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। যা সরাসরি ডলারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।

সরবরাহ লাইনছাড়াই অপরিকল্পিত বিদ্যুৎকেন্দ্র
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ খাতকে চরম অব্যবস্থাপনার খাত হিসেবে অভিহিত করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন পাস করে এগুলোকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। এ আইনের অধীনে দরপত্র ছাড়াই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতারাও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা নেন।

অনেক পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হলেও সেগুলো থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অর্থের অভাবে গ্যাস ও তেল কেনা যাচ্ছে না। এরকম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি স্থগিত বা রিনিউ করা হয়নি।

দেশের দক্ষিণে চারটি বড় বড় কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো পায়রা, রামপাল, এস আলম এবং মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ লাইন না থাকার কারণে এগুলো থেকে বিদ্যুৎ ঢাকার দিকে আনা যাচ্ছে না। অথচ তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়।

Link copied!