• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

২৮ ছাত্রসংগঠনের মতবিনিময়ে দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকার প্রত্যয়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ০৯:২৬ এএম
২৮ ছাত্রসংগঠনের মতবিনিময়ে দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকার প্রত্যয়

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ২৮টি ছাত্রসংগঠনের নেতারা। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে জীবন দিয়ে হলেও তা মোকাবিলার প্রত্যয় জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রাজধানীর কাঁটাবনের একটি রেস্তোরাঁয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ ২৮টি ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের এই সভা হয়। 

অনেকের আপত্তির কারণে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে এ সভায় ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন।

জানতে চাইলে নাছির উদ্দীন বলেন, “অনেকের আপত্তি থাকায় ছাত্রশিবিরকে ২৮ ছাত্রসংগঠনের মতবিনিময় সভায় ডাকা হয়নি।” 

তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তাদের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আমাদের আলোচনা হতে পারে।”

এর আগে, বুধবার রাতে ৩০টি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রনেতা হিসেবে অন্য সংগঠনগুলোর কোনো নেতাকে না ডেকে শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ডাকার প্রতিক্রিয়ায় বুধবারের বৈঠক কার্যত বর্জন করে ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনসহ বেশির ভাগ (ছাত্রশিবির বাদে) পরিচিত ছাত্রসংগঠন। মূলত সেই সংগঠনগুলো বৃহস্পতিবার মতবিনিময় করল।

সভা শেষে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। এতে বলা হয়, মতবিনিময় সভায় ছাত্রনেতারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকাসহ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ছাত্রনেতারা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছে। দেশের মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। গণ-অভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ ও ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ভারত রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে এখন নানা ধরনের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা তারই প্রকাশ। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত ব্যর্থ হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে হলেও মোকাবিলা করবে।

সভায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা, নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। দেশে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক যেকোনো পদক্ষেপ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে। একই সঙ্গে দখলদারমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র ও সংগঠনের অধিকার চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ও ছাত্ররাজনীতি বন্ধের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলবে। সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে (১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ও ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র) সংস্কার কমিশন গঠন করে সংস্কার শেষে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

সভায় গণ-অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকার সমালোচনা করা হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ছাত্রনেতারা বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রসংগঠনগুলোকে অপরায়নের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। অভ্যুত্থানে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহারের কারণে তা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই জাতীয় ঐক্যে যদি ভাঙনের সৃষ্টি হয়, তার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না।

সভায় অংশ নেওয়া অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে আছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্রপক্ষ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ভাসানী ছাত্র পরিষদ, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জেএসডি ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ (বিসিএল), রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রসমাজ ও জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ)৷

Link copied!