• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবনা

বাজেটে আয়ের ২৭ নতুন উৎস


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
বাজেটে আয়ের ২৭ নতুন উৎস
বাজেটে আয়ের নতুন উৎস। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। এতে বড় হচ্ছে বাজেটের আকার। তবে বিশাল আকারের বাজেট দেওয়া হলেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হচ্ছে না। এমন প্রবণতাকে অর্থনীতিবিদরা বাজেট সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে আসছেন। বিভিন্ন সময় তাদের পক্ষ থেকে রাজস্ব আয় আহরণে বিকল্প কিছু প্রস্তাবনাও দিয়ে আসছেন।

তবে অর্থনীতিবিদদের বিকল্প আয়ের সেসব প্রস্তাবনাকে সরকার কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। তারপরও এবারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের আয়ের ২৭টি নতুন উৎসের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

গত ৩ জুন ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৪-২৫ : উন্নত বাংলাদেশ অভিমুখী বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

রাজস্ব আয়ের প্রস্তাবিত উৎসগুলো হলো- ১. কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, ২. অর্থ পাচার উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, ৩. সম্পদ কর, ৪. অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর (অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ), ৫. বিলাসি দ্রব্য/ পণ্যের ওপর কর ৬. সংসদ সদস্যসহ অন্যদের ওপর গাড়ির শুল্ক মওকুফ বাতিল-উদ্ভুত আহরণ, ৭. বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর ৮. সেবা থেকে প্রাপ্ত কর ৯. বিমান পরিবহন ও ভ্রমণ কর, ১০. রয়‍্যালটি ও সম্পদ থেকে আয়।

এ ছাড়া আরও উৎসগুলো হলো- ১১. প্রতিরক্ষাবাবদ প্রাপ্তি, ১২. রেলপথ, ১৩. ডাক বিভাগ, ১৪. সরকারের সম্পদ বিক্রয়, ১৫. সেচবাবদ প্রাপ্তি, ১৬. তার ও টেলিফোন বোর্ড, ১৭. টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন, ১৮. এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, ১৯. ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন।

আরও উৎস হলো- ২০. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ২১. বিআইডাব্লিউটিএ, ২২. পৌর হোল্ডিং কর, ২৩. ডিজি হেলথ: বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টার অনুমতি ও নবায়ন ফি ২৪. ডিজি ড্রাগস: ঔষধ প্রস্তুতকারী কোং লাইসেন্স এবং নবায়ন ফিস, ২৫. বিউটিপার্লার সেবালব্ধ কর, ২৬. আবাসিক হোটেল/ গেস্ট হাউস ক্যাপাসিটি কর ২৭. বিদেশি পরামর্শ ফি।

প্রস্তাবিত উৎসগুলোর মধ্যে অন্যতম কালোটাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি। মূলত ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর এই ৫০ বছরে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এবারের বাজেটে মাত্র দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করা হয়েছে। সেখান থেকে আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। যা খুবই অপ্রতুল।

দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, অর্থ পাচার উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে বিদেশে অর্থপাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করা হয়েছে। যার পরিমাণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর রাজস্ব খাত থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা।

এদিকে, সংসদ সদস্যসহ অন্যদের ওপর গাড়ির শুল্ক মওকুফ বাতিল-উদ্ভুত আহরণের উৎসের কথা বলা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে।

এবারের বাজেটে এই প্রস্তাব করা হতে পারে। এতে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি–সুবিধা পুরোপুরি থাকবে না। একই প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হলে এ খাত সরকারের আয় বাড়বে বলে মনে করে সংগঠনটির কর্মকর্তারা।

আয়ের বিকল্প উৎস হিসেবে বিদেশি নাগরিকদের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে এনবিআর। সে সময় সব বিদেশি কর্মীর আয়ের ওপর কর দেওয়ার নির্দেশ দেয় এনবিআর। আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের আয় বাড়ানোর লক্ষে এ উৎসে কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে অর্থনীতি সমিতিও।

প্রস্তাবনায় বিলাসী দ্রব্য/ পণ্যের ওপর কর বসানোর কথা বলা হয়েছে। মূলত আমদানি করা বিলাসী দ্রব্য/পণ্য শুল্কায়নের আওতায় আছে। এ খাত থেকে প্রতিবছর সরকারের মোটা অংকের আয় করা সম্ভব বলে প্রস্তাবনা দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি।

বিমান পরিবহন ও ভ্রমণ করারোপকে বিকল্প রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি। মূলত, দেশের ভেতরে কিংবা বিদেশে যেতে বিমানে উঠলেই ভ্রমণ কর দিতে হয়। স্থলপথে বিদেশ যেতেও দিতে হয় ভ্রমণ কর। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভ্রমণ কর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রস্তাবিত অন্য উৎসগুলো সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্ভাবনাখাত হিসেবে বিবেচনা করছে অর্থনীতি সমিতি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। 

Link copied!