ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রক্সি দেওয়া হতো সরকারি চাকরির ভর্তি পরীক্ষা। বিনিময়ে দেওয়া হতো এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রায় ১০ বছর ধরে সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার এ ‘প্রক্সি’ চক্রের সন্ধান মিলেছে।
আটক হওয়া একজনের হোয়াটসঅ্যাপে মিলেছে সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রায় কয়েকশ অ্যাডমিট কার্ড। টাকার বনিবনা না হওয়ায় প্রকাশ্যে চলে আসে এ প্রক্সিকাণ্ডের ঘটনা।
শনিবার (১৩ জুলাই) দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর ধরে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি ও প্রশ্ন ফাঁস করে আসছেন কাউছার আলী। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজার জন্য ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী খুঁজে দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানেই হাতেনাতে ধরা পড়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে।
কাউছার আলীর বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির কুয়াতপুরে। তিনি জানান, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি পড়ালেখা শেষ করেন।
মেসেঞ্জারের সঙ্গে আলাপে বেরিয়ে আসে কাউছারের প্রশ্নফাঁস ও ‘প্রক্সি’ কাণ্ডের নানা তথ্য।
কাউছার আলী বলেন, নিজে অন্তত তিনটি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী হয়েছেন। ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী খুঁজে দিতে সহায়তা করেছেন আরও ১৪-১৫টি পরীক্ষায়। এবার জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজার হয়ে যে প্রক্সি পরীক্ষার্থী খুঁজতে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন। সে দাবির পক্ষে রেজার সঙ্গে এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে আলাপচারিতার প্রমাণও দেখিয়েছেন।
কাউছার জানিয়েছেন, মূলত পরীক্ষায় বসার জন্যই তিনি ২০ হাজার টাকা করে নেন। নিজে পরীক্ষা না দিতে পারলে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দেন। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর পাশ করলে চাকরিভেদে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী জোগাড় করে দিলে তার সঙ্গেও এ টাকা ভাগাভাগি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী পেলে পরীক্ষায় বসার জন্য ২০ হাজার টাকা এবং পাশ করলে এক থেকে দেড় লাখ টাকার ‘চুক্তি’ আবু বকর সিদ্দিক রেজার সঙ্গেও হয়েছিল বলে দাবি কাউছারের।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাউছার আলীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষার্থী। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার কথা। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রমাণও তিনি দেখিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে।